আয় করুন ঘরে বসে কোডিং শিখে । অ্যাপ তৈরি করুন
বিল গেটস, যে টানা ২১ বারের মত বিশ্বের সেরা ধনী হিসেবে ছিলেন। শুরু করেছেন কোডিং দিয়ে। প্রোগ্রামিং দিয়ে। আমরা অনেকেই কোডিং শেখার জন্য অনেক সময় নষ্ট করি এবং অনেকে কিছু ঘাটাঘাটি করি কিন্তু প্র্যাকটিস করি না।
উচ্চমাধ্যমিক পড়তে পড়তে অনেকেই কোডিং শিখে ফেলেন। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং অথবা কোডিং বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া। এটি কম্পিউটারের যাবতীয় কর্মকান্ডের পেছনের মৌলিক প্রক্রিয়া। কম্পিউটার যেসব কাজ করে, সেসব কাজ করার জন্য প্রোগ্রাম তৈরি করার নামই কোডিং। যাবতীয় সফটওয়্যার এবং গেম তৈরি হয় এই কোডিংয়ের মাধ্যমেই। অনেকেই একে দুর্বোধ্য এবং অসাধ্য কোনো কাজ বলে মনে করলেও এটি আসলে ততটাও দুর্বোধ্য না।
অন্যদিকে অনেকে একাডেমিক প্রয়োজনে কিছুটা কোডিং শিখেও পরবর্তীতে অ্যাডভান্স লেভেলের কোডিংয়ের কাজ করা থেকে বিরত থাকেন কেবল এই ভেবে যে এটি অত্যন্ত কঠিন। আদতে প্রাথমিকভাবে শেখাটা কিছুটা জটিল মনে হলেও কোডিং করা একটি মজাদার কাজ। শুধু মজাদারই নয়, কোডিং করে যে অর্থ আয়ও করা সম্ভব। যদি কম্পিউটার কোডিং দিয়ে পূর্ণকালীন ক্যারিয়ার গড়তে না-ও চান, তথাপি খণ্ডকালীন কোডিং করে ঘরে বসে অর্থ আয় করতেই পারেন।
চলুন জেনে নিই এমন পাঁচটি উপায় যেগুলোর মাধ্যমে ঘরে বসে কোডিং করে অর্থ আয় করতে পারবেন।
অ্যাপ তৈরি করুন
অধিকাংশ মানুষের মাঝেই একটি বড় রকমের ভুল ধারণা কাজ করে যে মোবাইলের অ্যাপ বা গেম তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন এবং জটিল একটি কাজ। অথচ মৌলিক কোডিং তথা সি প্রোগ্রামিং কিংবা সুইফট জানা থাকলে একটি মোবাইল অ্যাপ কিংবা একটি মোবাইলে খেলার উপযোগী গেম তৈরি করা মাত্র কয়েক ঘন্টার কাজ। এর জন্য কেবল প্রয়োজন প্রোগ্রামিং দক্ষতা থাকা এবং অ্যাপের বা গেমের আইডিয়া।
আজকাল অবশ্য স্বয়ংক্রিয় কোডিং সফটওয়্যার পাওয়া যায় যেগুলো দিয়ে মাত্র কয়েক মিনিটেই একটি অ্যাপ বানিয়ে ফেলা সম্ভব। এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করলে আপনার কোনো ধরনের কোডিংও করতে হবে না। তথাপি এসব সফটওয়্যার ব্যবহার করলে অবশ্যই নিজের ইচ্ছামতো কাস্টমাইজ করে অ্যাপ তৈরি করা সম্ভব না-ও হতে পারে। প্রোগ্রামিং জানা থাকলে যেকোনো কিছু করতেই কোনো বাঁধা নেই। অ্যাপ বা গেম তৈরি হয়ে গেলে তা প্লেস্টোরে লঞ্চ করে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করে অর্থ আয় করা যায়।
লোকাল সার্ভিস
খণ্ডকালীন কোডিং করে স্থানীয় লোকজনের বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মিটিয়েও অর্থ আয় করা যায়। এক্ষেত্রে নিজের প্রচার প্রচারণা করতে হবে এবং তাতে আপনার দক্ষতা ও কাজের ধরনের স্পষ্ট বর্ণনা দিতে হবে। এরকম অনেক ব্যবসায়ী কিংবা নতুন উদ্যোক্তা রয়েছেন যারা শুরুতে সহজ সাধারণ ওয়েবসাইট কিংবা অ্যাপ দিয়ে শুরু করতে চান।
কিন্তু নতুন উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসায়ী, কারোর পুঁজিই অত বেশি না হওয়ায় তারা পেশাদার ওয়েব ডেভলপার কিংবা কোনো বড় আইটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের সেবা নিতে পারে না। এক্ষেত্রে তাদের সমস্যার সমাধান হতে পারে আপনার মতো ফ্রিল্যান্সাররা। অ্যাডভান্স লেভেলের কাজ তারা আপনার নিকট প্রত্যাশা করবে না। অনুরূপ, তারা যেরূপ সাধারণ কাজের প্রত্যাশা করবে, সেরূপ পেমেন্টের প্রত্যাশা রাখাই ভালো।
এসব কাজে আপনি প্রচুর অর্থ আয় করতে পারবেন না। কিন্তু নিয়মিত এ কাজগুলো করে গেলে আপনার পোর্টফোলিও সমৃদ্ধ হবে, অনেক কাজের অভিজ্ঞতা হবে। আর ফ্রিল্যান্সিংয়ে অধিক পেমেন্টের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো অভিজ্ঞতা।
টিউটোরিয়াল বানান
পার্টটাইম কোডিং করে অর্থ আয়ের এটি একটি চমৎকার উপায়। কেননা এতে আপনার তেমন অতিরিক্ত কোনো কাজই করতে হবে না। কেবল যা-ই নিজের কম্পিউটারে করছেন তার স্ক্রিন রেকর্ড করুন এবং সাথে কিছু টেক্সট কিংবা ভয়েস ওভার জুড়ে দিন। ব্যস, তৈরি হয়ে যাবে টিউটোরিয়াল। এসব টিউটোরিয়াল ইউটিউবে আপলোড করে গুগল অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করতে পারেন, সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রয় করতে পারেন কিংবা কোনো জনপ্রিয় চ্যানেলের নিকট এককালীন অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করতে পারেন।
সবসময় মনে রাখবেন, সবকিছু শিখে আপনি যখন কোডিং করতে কম্পিউটারের সামনে বসছেন, তখন আরো হাজারো মানুষ কম্পিউটারের সামনে বসছে প্রোগ্রামিং শেখার উদ্দেশ্যে। তাদের একটা ক্ষুদ্র অংশই বিভিন্ন কোর্স করে শিক্ষা নেয়। বাকীরা ইউটিউবে, গুগলে টিউটোরিয়ালের খোঁজ করে। তাই অ্যাপ বা গেম তৈরির সময় কিংবা নিজের অন্যান্য ফ্রিল্যান্স কাজের সময় ঐ কাজটিই স্ক্রিন রেকর্ড করে টিউটোরিয়াল হিসেবে অতিরিক্ত অর্থ আয় করতে পারেন।
কোডিং প্রতিযোগিতা
যদি আপনি মনে করেন যে আপনার কোডিং দক্ষতা কেবল কিছু ফ্রিল্যান্সিং আর অ্যাপ তৈরি করার চেয়েও ভালো, তাহলে অংশগ্রহণ করুন বৈশ্বিক কোডিং প্রতিযোগিতাগুলোয়। এসব প্রতিযোগিতায় সারা বিশ্বের নানাপ্রান্ত থেকে অসংখ্য তরুণ প্রোগ্রামারের সাথে লড়াই করে নিজের দক্ষতা ঝালিয়ে নিন। এটি একদিকে যেমন মজার, অন্যদিকে আপনাকে আর্থিকভাবেও লাভবান করবে।
টপকোডার, গুগল কোড জ্যাম, মাইক্রোসফট ইমাজিন কাপ, ইত্যাদির মতো বৈশ্বিক কোডিং প্রতিযোগিতাগুলোয় হাজার হাজার তরুণ প্রোগ্রামার অংশ নেয়। তাদের মধ্যে বিজয়ীরা স্বীকৃতির পাশাপাশি পায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থও।
ফ্রিল্যান্সিং
আবারো ফ্রিল্যান্সিংয়ের আলোচনায় ফিরে আসতে হলো, তবে এটি উপরে বর্ণিত লোকাল সার্ভিসের মতো নয়। লোকাল সার্ভিসে মূলত অনানুষ্ঠিকভাবে আপনি কাজ করবেন এবং ক্লায়েন্টের সাথে দরকষাকষির ভিত্তিতে আপনার পারিশ্রমিক নির্ধারিত হবে। কিন্তু ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার কিংবা প্রোফাইল গড়ে তোলা সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার।
প্রথমে আপওয়ার্ক, ফাইভার কিংবা ফ্রিল্যান্সারের মতো প্ল্যাটফরমে নিজের একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সেখানে আপনার কাজের বর্ণনা দিতে হবে। লোকাল সার্ভিসের মতো এখানে মৌলিক জ্ঞান দিয়ে চলবে না। কারণ এখানকার ক্লায়েন্টরা ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড কাজ প্রত্যাশা করবে এবং সে অনুযায়ীই আপনার পারিশ্রমিক নির্ধারণ করবে। তাই প্রথম প্রথম কাজ পাওয়াটাই কঠিন মনে হবে। তবে ভয় পাবার কিছু নেই। নিজের প্রোফাইল তৈরি করতে থাকুন, ছোট খাটো কাজের বর্ণনা নিজের প্রোফাইলে যোগ করতে থাকুন। প্রোফাইল যত সমৃদ্ধ হবে, কাজ পাবার সম্ভাবনা তত বাড়বে। আর কাজ করতে করতে আপনি যত অভিজ্ঞ হবেন, আপনার পারিশ্রমিকও তত বাড়বে।