আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড Hacked হলে বুঝবেন যেভাবে… সব সময় যে আপনাকে জানিয়ে, মাইকে ঘোষণা দিয়ে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা হবে, তা না-ও হতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হ্যাকারের উদ্দেশ্য থাকে ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি করা। সেই তথ্য পরে এককাট্টা করে চড়া দামে কালোবাজারে বিক্রি করে।
তথ্য চুরির উদ্দেশ্যে অ্যাকাউন্ট হ্যাক করলে ধরে নিতে পারেন তা নিয়ে হ্যাকার কোনো উচ্চবাচ্য করবে না। বরং আপনার অ্যাকাউন্টে ঢোকার সুযোগ পেলে ঘাপটি মেরে বসে থেকে নজর রাখবে।
আর যাঁরা ভাবেন, আমার মতো আমজনতার অ্যাকাউন্ট কে হ্যাক করবে, কে জানে হয়তো তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্যই চুরি গেছে। সেটা কীভাবে পরীক্ষা করবেন, তা নিচে দেওয়া আছে। তার আগে চলুন আমরা দেখে নিই কেউ আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঘাপটি মেরে থাকলে আপনি বুঝবেন যেভাবে।
Facebook অ্যাকাউন্ট অ্যাক্টিভিটি পরীক্ষা করুন…
মনে খানিকটা সন্দেহ এলেও আপনার অ্যাকাউন্টের অ্যাক্টিভিটি লগ পরীক্ষা করে দেখুন। ফেসবুকে আপনি যা-ই করেন, সময় অনুযায়ী সেই কাজগুলোর তালিকা থাকে অ্যাক্টিভিটি লগে। তালিকায় কোনো অস্বাভাবিক কার্যক্রম দেখলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
অ্যাক্টিভিটি লগ দেখতে শুরুতে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লগইন করুন। ওয়েব সংস্করণে পর্দার ওপরের ডান কোনায় ‘অ্যারো’ বোতামে ক্লিক করে ‘সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি’ থেকে ‘অ্যাক্টিভিটি লগ’ নির্বাচন করুন।
লোকেশন হিস্ট্রি দেখুন
লোকেশন হিস্ট্রি চালু রাখলে ফেসবুক আপনার অবস্থানসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে। তবে সেটি চালু থাকলে হ্যাকার আপনার অ্যাকাউন্টে ঢুকলে তার অবস্থানও লিপিবদ্ধ হয়ে যাবে।
কোনো অবস্থান অপরিচিত ঠেকলে ধরে নিতে পারেন অন্য কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট প্রবেশ করেছে। অবশ্য হ্যাকারের অবস্থান আপনার কাছাকাছি হলে ধরা মুশকিল। আবার আপনি যদি ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করেন, তবে স্বাভাবিক কারণেই নতুন অবস্থান দেখবেন সে তালিকায়।
লোকেশন হিস্ট্রি কেবল অ্যাপ থেকে দেখা যায়। ফেসবুকের অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপে ওপরের ডান কোনা থেকে আড়াআড়ি তিনটি রেখাযুক্ত আইকনে ট্যাপ করুন। এরপর ‘সেটিংস অ্যান্ড প্রাইভেসি’ থেকে ‘প্রাইভেসি শর্টকাটস’ নির্বাচন করুন। এরপর যেতে হবে ম্যানেজ ইয়োর লোকেশন সেটিংস > লোকেশন হিস্ট্রি > ভিউ ইয়োর লোকেশন হিস্ট্রি।
অস্বাভাবিক ই–মেইল ও মেসেজ
অ্যাকাউন্ট রিকভারি অপশনের মাধ্যমে অনেক সময় ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। তাই ই–মেইলে এমন কোনো বার্তা এলে সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় মুঠোফোন নম্বরে গোপন কোড আসে। আবার অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সুযোগ পেলে আপনার বন্ধুতালিকার মানুষদের অদ্ভুত বার্তা পাঠায়। তাই ইনবক্সও পরীক্ষা করে দেখুন কোনো অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ে কি না।
প্রোফাইলের তথ্য পরীক্ষা করুন
আপনার প্রোফাইলের তথ্যে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না দেখুন। বিশেষ করে আপনার মুঠোফোন নম্বর ও ই–মেইল ঠিকানায়।
ফেসবুকের তথ্য ফাঁসে আপনার তথ্য আছে কি না দেখে নিন
ফেসবুকে পুরোনো এক নিরাপত্তাত্রুটির কারণে কিছুদিন আগে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১০৫টি দেশের ৫৩ কোটির বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য ফাঁস হয়েছিল। সেখানে ব্যবহারকারীর নাম, মুঠোফোন নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা, ভৌগোলিক অবস্থান, জন্মতারিখ, পেশা, রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস কিংবা অ্যাকাউন্ট তৈরির তারিখ পর্যন্ত আছে। যে ফোরামে নতুন করে তথ্যগুলো ফাঁস করা হয়, সেখানে ৩৮ লাখের বেশি বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর তথ্যও ছিল।
সেখানে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য আছে কি না, তা জানা যাবে ‘হ্যাভ আই বিন পনড’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে। ওয়েবসাইটটিতে গিয়ে আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত ই–মেইল ঠিকানা কিংবা মুঠোফোন নম্বর দিলে বলে দেবে সেটি ফাঁস হওয়া তথ্যে আছে কি না।
যা করতে হবে
শুরুতে haveibeenpwned.com ঠিকানার ওয়েবসাইটে যান।
এবার আপনার মুঠোফোন নম্বর কিংবা ই–মেইল ঠিকানা ইনপুট দিয়ে ‘pwned?’ লেখা বোতাম চাপুন। মুঠোফোন নম্বরের বেলায় লিখতে হবে ইংরেজিতে এবং আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে। অর্থাৎ ‘+8801…’ এভাবে, কোনো স্পেস ছাড়া।
আপনার অ্যাকাউন্ট ফাঁস হওয়া তথ্যে থাকলে লাল, না থাকলে সবুজ বার্তা দেখাবে।
লাল বার্তা দেখালে খানিকটা নিচে স্ক্রল করলে পাবেন কবে কোন তথ্য ফাঁসে আপনার মুঠোফোন নম্বর কিংবা ই-মেইল ঠিকানা যুক্ত ছিল।
আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের তথ্য যদি ফাঁস হয়ই, তবে ঘাবড়ে যাবেন না। বরং তা থেকে শিক্ষা নিতে পারেন। ফেসবুকে কিছু শেয়ার করার আগে নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন, এটা ফাঁস হলে আপনার কোনো ক্ষতি হবে কি না। নির্ভরযোগ্য সেবা ছাড়া ফেসবুকের সাহায্যে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার ফেসবুকের তথ্য ব্যবহারের জন্য কোনো অ্যাপ বা সেবা অনুমতি চাইলে, তা পড়ে দেখুন। মনে খানিকটা দ্বিধা থাকলেও সম্মতি দেবেন না।