ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ কি? ফ্যাসিবাদ (ইংরেজি: Fascism) হচ্ছে র্যাডিক্যাল কর্তৃত্বমূলক জাতীয়তাবাদের একটি রূপ। যা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ইউরোপে খ্যাতি লাভ করে।
১ম বিশ্বযুদ্ধের পর ইটালিতে ফ্যাসিবাদ উৎপত্তি লাভ করে জাতীয় সিন্ডিক্যালবাদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে। এটি বিশেষভাবে বামপন্থী রাজনীতির উপাদান গ্রহণের মাধ্যমে ডানপন্থী রাজনীতিতে অবস্থান গ্রহণ করে; এবং এটি ছিল সমাজতন্ত্র, উদারতাবাদ, সাম্যবাদ, ডানপন্থী রক্ষণশীল, গণতান্ত্রিকের বিরোধী। যদিও ফ্যাসিবাদকে বাম-ডান রাজনীতিতে সাধারণভাবে দূর ডানে জায়গা দেয়া হয়, কতিপয় স্ব-ব্যাখ্যাত ফ্যাসিবাদী এবং কিছু মন্তব্যকারীরা বলেছেন যে এই বিবরণ যথার্থ নয়। এটি মুলত রাষ্ট্রের সকল মানুষকে একাত্ব করে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে। এই কাজে তারা নির্ভর করে একটি বিশেষ বাহিনী বা গোষ্ঠীর উপর যারা পূর্বে রাজনৈতিক অঙ্গনে ততটা প্রভাবশালী ছিল না। যাদের এই আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে তারাই পরবর্তীকালে রাষ্ট্র নেতৃতে অগ্রনী দায়িত্ব নেয়।

সেই রাষ্ট্র তখন প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক সহিংসতা, যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদকে অনুমোদন দেয় এবং রাষ্ট্রের মতে নতুনভাবে রাষ্ট্র গঠনের জন্য এগুলো মৌলিক বিষয়। ফ্যাসিবাদী মতাদর্শ অনুযায়ী উচ্চবিত্ত বা প্রভাবশালী রাষ্ট্রের (তারা নিজেদেরকেও এই শ্রেণীতে রাখে) উচিত অন্য দুর্বল বা যাদের অর্থনীতি তেমনটা মজবুত নয় এমন রাষ্ট্র বা জাতিকে দখল করে স্থানচ্যুত করা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদীরা অন্য সংস্কৃতির প্রতি অশ্রদ্ধাশীল হয়ে থাকে এবং জাতি ও সংস্কৃতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে।
দেশের সকল শ্রেণীর মানুষকে একাত্ব করাই অর্থাৎ শ্রেণীবিভাজন দূর করে রাষ্ট্র পরিচালনা করাই ফ্যাসিবাদের লক্ষ্য। অনেক বিশ্লেষকের মতে ফ্যাসিবাদ পুঁজিবাদ ও সাম্যবাদের মাঝখানে অবস্থিত বা তৃতীয় “অবস্থান’’ বলেও উল্লেখ করেছেন। ফ্যাসিবাদী অর্থনীতি স্বনির্ভরতার উপর গুরত্ব দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফ্যাসিবাদী সরকার সামরিকায়নিত হয় বা সামরিক বাহিনীর ওপর অতিনির্ভর ও আস্থাশীল।
ইতালির জাতীয় শ্রমিক আন্দোলন জাতীয়তাবাদ থেকে ফ্যাসিবাদ উত্থান হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে কোন রাজনৈতিক দলই খোলাখুলিভাবে নিজেদের ফ্যাসিবাদী বলে দাবি করতে চায় না। এখন সাধারণত রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধী দলের প্রতি ঘৃণা বা রাগ প্রকাশের জন্য এই শব্দ ব্যবহার করে। ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার এবং ইতালির বেনিতো মুসোলিনি উল্লেখযোগ্য।
ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠী জনগণের সামনে সোনালি অতীতের গল্প হাজির করে এবং জাতিকে সেই সোনালি অতীতের মতো উজ্জল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। ফ্যাসিবাদের মূল সুবিধাভোগী হয় শহর কেন্দ্রীক শক্তিশালী গোষ্ঠীগুলো এবং সিভিল ও সামরিক আমলাতন্ত্র। ফ্যাসিবাদ যখন নিরাপদ ও শক্তিশালী অবস্থানে উপনীত হয়, তখন সিভিল ও সামরিক প্রশাসন কোন একটি রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসায় এবং রক্ষা করে এ উদ্দেশ্যে যে রাজনৈতিক গোষ্ঠীটি তাদের সমস্ত কর্মকান্ডের আইনগত, রাজনৈতিক ও ভাবাদর্শগত বৈধতা দিবে।

প্রশ্নঃ ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ কি? মুসোলিনিকে কেন ফ্যাসিজমের জনক বলা হয় ?
ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ হচ্ছে একটা চরমপন্থী, জাতীয়তাবাদী, কর্তৃত্বপরায়ন রাজনৈতিক মতাদর্শ। এই দর্শন সবকিছুকেই রাষ্ট্রের নামে নিজেদের অধীন বলে মনে করে। রাষ্ট্র হচ্ছে বর্ম, নেপথ্যে থাকে একটি সর্বগ্রাসী দল বা গোষ্ঠী, ফ্যাসিবাদ যাদের আদর্শ। ফ্যাসিবাদে রাষ্ট্রের গুরুত্বের ওপর জোর দেয়া হয়। ফ্যাসিবাদ সেই গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বিরোধী, যে গণতন্ত্রে জাতিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে বিচার করা হয়। এখানে ভিন্নমতের কোন ঠাঁই নেই। এ জন্য ফ্যাসিবাদে ভিন্নমতকে সহ্য না করে দমন করা হয়।
মুসোলিনির পুরো নাম বেনিটো অ্যামিলকেয়ার আন্দ্রে মুসোলিনি (জন্ম ১৮৮৩ সালের ২৯ জুলাই, নিহত হন ১৯৪৫ সালের ২৮ এপ্রিল)। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন ইতালীয় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, শিক্ষক ও সৈনিক। নেতৃত্ব দেন ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টির। তাকে ফ্যাসিবাদের জনক বলা হয়। কারন, তার দ্বারা ইতালীতে ফ্যাসিবাদের সূচনা হয়েছিলো।
১৯২২ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে মুসোলিনি ইতালির ৪০তম প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯২৫ সাল থেকে ‘ইল ডুসে’ বা ‘দ্য লিডার’ উপাধি ব্যবহার করতে শুরু করেন। ডুচে হচ্ছে ইতালীয় খেতাব, যার অর্থ ‘নেতা’। যেমন হিটলার গ্রহণ করেন তার ‘ফুয়েরার’ খেতাব। ফুয়েরার শব্দের অর্থও ‘নেতা’। ন্যাশনাল ফ্যাসিস্ট পার্টির নেতা মুসোলিনিকে ফ্যাসিস্টরা তাদের ফ্যাসিস্ট আন্দোলনের নেতা হিসেবে ধরে নেয়। সরকারপ্রধান ও ফ্যাসিজমের নেতা হিসেবে তিনি ১৯২৫ সালে ইতালিতে যে ফ্যাসিজমের প্রতিষ্ঠা করেন, তা ধরে রাখেন ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত। ১৯৩৬ সালের পর মুসোলিনির সরকারি পদবি ছিল : ‘হিজ এক্সেলেন্সি বেনিটো মুসোলিনি, হেড অব গভর্নমেন্ট, ডুচে অব ফ্যাসিজম, অ্যান্ড ফাউন্ডার অব দ্য এম্পায়ার’। তিনি সৃষ্টি ও অধিকার করেছিলেন একটি বিশেষ সামরিক পদ : ‘ফার্স্ট মার্শাল অব দ্য এম্পায়ার’। রাজার পদমর্যাদার তার আরেক উপাধি ছিল : ‘ভিক্টর তৃতীয় ইমানুয়েল’। এ উপাধি সূত্রে তিনি ইতালির সামরিক বাহিনীর ওপর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণাধিকার প্রয়োগ করতেন। তিনি ৭০০০-এর বেশি ইহুদিকে ইতালি থেকে বহিষ্কার করেছিলেন। এদের মধ্যে প্রায় ৬০০০ ইহুদিকে পরে হত্যা করা হয়েছিল।
মুসোলিনির ফ্যাসিবাদের উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল : ন্যাশনালিজম, করপোরেটিজম, ন্যাশনাল সিন্ডিক্যালিজম, এক্সপানশন্যালিজম, সোস্যাল প্রগ্রেস,অ্যান্টিসোস্যালিজম। আর এর সাথে সম্মিলন ঘটানো হয় সেন্সরশিপ অব সাববারসিভ’ এবং ‘স্টেট প্রপাগান্ডার’।
Share the post "Fascism ফ্যাসিজম বা ফ্যাসিবাদ কি?"