বাংলা নামঃ পিয়াজ
ইংরেজী নামঃ Onion
বৈজ্ঞানিক নামঃ Allium cepa
পরিবারঃ Amaryllidaceae
বাঙ্গালীর খাদ্য তালিকায় পিয়াজ একটি অবিচ্ছেদ্য উপাদান। পরিমানের দিক দিয়ে পিয়াজ বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ মসলা। পিয়াজ সাধারনত মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হলেও সবজি ও সালাদ হিসাবেও পিয়াজের ব্যবহার সব দেশেই প্রচলিত আছে। অন্যান্য অনেক মসলার ন্যায় পেয়াজ কেবল খাদ্যদ্রব্যকে আকর্ষণীয় ও খাদ্যের স্বাদই বৃদ্ধি করে না, খাদ্যের পুষ্টি গুনও বৃদ্ধি করে এবং এর ঔষধিগুনও অপরিসীম। ক্ষত প্রতিষেধক হিসাবে, সর্দি-কাশিতে এবং আমাশয় নিরাময়ে পিয়াজ ব্যবহৃত হয়। পশ্চিম এশিয়া পেঁয়াজের উৎপত্তি স্থান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মিশর ও স্পেন বিশ্বের প্রধান চারটি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী দেশ। এ ফসলটি ১.৪১ লক্ষ হেক্টর জমিতে প্রায় ৭.৫৪ লক্ষ মে. টন উৎপাদিত হয়। অথচ আমাদের দেশে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ১৪.৬০ লক্ষ মে.টন। বাংলাদেশের সমগ্র উত্তরবঙ্গ, কুষ্টিয়া, যশোহর ও ফরিদপুর অঞ্চলে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়।
জাত
এলাকাভেদে বিভিন্ন স্থানীয় জাত যেমন তাহেরপুরী, ফরিদপুর ভাতি, ঝিটকা, কৈলাসনগর উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট বারি পেঁয়াজ-১ নামে একটি শীতকালীন পেঁয়াজের জাত উদ্ভাবন করেছে। এছাড়াও বারি পেঁয়াজ-২ ও বারি পেঁয়াজ-৩ নামে খরিপ মৌসুমের দুটি জাত উদ্ভাবন করেছে। বারি পেঁয়াজ-২ ও ৩ খরিপ মৌসুমে অর্থাৎ গ্রীস্মকালেও চাষের উপযোগী।
মাটি ও আবহাওয়া
পেঁয়াজকে সাধারণত ঠান্ডা জলবায়ু উপযোগী ফসল বলে বর্ণনা করা হয়। উর্বর মাটি এবং সেচ ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে হয়। ১৫-২৫ সেঃ তাপমাত্রা পেঁয়াজের জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী। উচ্চ তাপমাত্রায় জন্মানো পেঁয়াজে ঝাঁঝ বেশি হয়। অধিক এঁটেল মাটিতে পেঁয়াজের চাষ করা যায় না। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম।
চাষ পদ্ধতি
জমি তৈরি ও চারা রোপণ
জমি ৪-৫ টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে আগাছা বেছে, মাটির ঢেলা ভেঙ্গে মাটি ঝুরঝুরা ও সমতল করে চাষের জন্য উত্তমরূপে তৈরি করতে হবে। ১৫ সে.মি. দূরে দূরে লাইন টেনে লাইনে ১০ সে.মি. দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে। দুইটি বেডের মাঝখানে পানি সেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধার জন্য ৫০ সে.মি. প্রশস্থ নালা রাখতে হবে।
বংশবিস্তার/রোপন পদ্ধতি ও সময়
পেঁয়াজ তিনটি পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। যেমনঃ ১) শল্ক কন্দ রোপন করে। প্রতি হেক্টর জমিতে দেশী জাতের চারা তৈরী করে তা রোপন করতে হলে ৩-৪ কেজি ভাল বীজ প্রয়োজ্ন। অপরদিকে সরাসরি জমিতে বীজ বুনে পেঁয়াজ চাষে হেক্টরপ্রতি ৬-৭ কেজি বীজের প্রয়োজন। আকার ভেদে হেক্টর প্রতি ১২০০-১৫০০ কেজি শল্ক কন্দ দরকার হয়। ২) সরাসরি বীজ বুনে। এক্ষেত্রে ৬-৮ কেজি বীজ দরকার হয়। ৩) বীজতলায় বীজ বুনে চারা উত্তোলন করে তা রোপন করে। বীজ হতে চারা তৈরি করে রোপন করলে অধিক ফলন হয় এবং কৃষকগণ অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হন। এ পদ্ধতিতে অক্টোবর মাসে বীজ তলায় বীজ বপন করতে হয়। বপন পদ্ধতি অনুসরণ করলে এ সময়েই কন্দ বা বীজ সরাসরি জমিতে বুনতে হবে।
বীজতলা তৈরি
সাধারণত বীজতলা ১৫-২০ সে.মি. উচু এবং বীজতলা ৩ x ১ মি. আকারের হতে হবে। প্রতি বীজ তলায় ২৫-৩০ গ্রাম হিসাবে বীজ বুনতে হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে চারা উৎপাদনের জন্য ৩ x ১ মি. আকারের ১২০-১৩০টি বীজতলার প্রয়োজন হবে। বীজতলার মাটি প্রতি ১ ভাগ ফরমালডিহাইডের সাথে ৫০ ভাগ পানি মিশিয়ে শোধন করে নিলে ভাল হয়।
বীজতলায় চারা উঁইপোকা ও পিপঁড়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এদের আক্রমন প্রতিরোধ করার জন্য ফুরাডন ৫ কেজি বীজতলায় ছিটিয়ে একটি হালকা সেচ দিতে হবে। বীজতলায় চারা ড্যাম্পিং অফ রোগগ্রস্ত হতে পারে। এর থেকে রক্ষা করার জন্য ২৫-৩০ গ্রাম ডাইথেন এম-৪৫ ঔষধ ১০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে বীজতলার মাটিতে ছিটিয়ে দিতে হবে (বীজ বপনের কিছু পূর্বে)। বপনের বীজ অল্পক্ষণের জন্য ভিজিয়ে এবং সামান্য ঘষে (আস্তে আস্তে) নিতে হবে। বীজ বপনের আগে ১ ভাগ বীজের সাথে ৯ ভাগ শুকনা ছাই অথবা ঝুরঝুরা মাটি মিশিয়ে নিতে হবে। বীজতলার বীজ সমানভাবে ছিটিয়ে হাত আচরা অথবা হাতের সাহায্যে ঝুরঝুরা মাটি দিয়ে ০.৫-১.০ সেঃমিঃ গভীরে বীজ ঢেকে দিতে হবে। বীজ যদি বেশি মাটির নিচে বোনা বা বপন করা হয় তবে কম পরিমানে গজাবে বা গজাতে অসুবিধা হবে।
বীজতলায় মাটিতে রস কম থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শীত মৌসুমে সকালে কুয়াশার পানি পাতার উপর হলে সে পানি একটি কাঠি বা দড়ির সাহায্যে মাটিতে ফেলে দিলে চারাগুলো এই পানি ব্যবহার করে পানির চাহিদা পূরন করতে পারে।
বীজ বপন ও চারা রোপণ সময়
শীতকালীন জাতগুলোর বীজ মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে বীজতলায় বপন করতে হয় এবং অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা ক্ষেতে রোপণ করতে হয়।
গ্রীস্মকালীন জাতগুলো যেমন বারি পেয়াজ ২ ও ৩ আগাম চাষ করতে হলে মধ্য ফেব্রুয়ারী থেকে মার্চের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করতে হয় এবং এপ্রিল মাসে ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপণ করা যায়।
গ্রীষ্মকালীন জাতগুলো নাবি চাষ করতে হলে জুলাই মাসে বীজতলায় বীজ বপন করতে হয় এবং মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বর মাসে ৪০-৫০ দিন বয়সের চারা মাঠে রোপণ করতে হয়। গ্রীস্মকালীন জাতগুলোর জন্য বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত প্রায় ৯৫-১১০ দিন এবং শীতকালীন জাতগুলোর জন্য ১৩০-১৪০ দিন সময় লাগে।
এ সময়ে বীজ বপন ও চারা রোপনের সময় অত্যধিক বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পলিথিন/চাঁটাই ব্যবহার করা যেতে পারে।
সার প্রয়োগ
পেঁয়াজের জমিতে নিম্নরূপ পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হয়।
সার মোট পরিমাণ* (হেক্টর প্রতি) শেষ চাষের সময় দেয় পরবর্তী পরিচর্যা হিসাবে দেয়
(২০ দিন পর)
গোবর ১০ টন সব –
ইউরিয়া ২৫০ কেজি ১৬৭ কেজি ৮৩ কেজি
টিএসপি ২৭৫ কেজি সব –
এমপি ১৫০ কেজি সব –
জিপসাম ১১০ কেজি সব –
জিংক অক্সাইড ৩.০ কেজি সব –
সুএঃ গ্রীস্মকালীন বারি পেঁয়াজ ২ ও ৩ এর উৎপাদন পদ্ধতি, মসলা গবেষনা কেন্দ্র, বারি, জয়দেবপুর।
* মাটির উর্বরতাভেদে সার ও তার পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে।
আন্তঃবর্তীকালীন পরিচর্যা
পেঁয়াজের জমিতে মাটির প্রয়োজনীয় রস না থাকলে প্রতি ১০-১৫ দিন অন্তর পানি সেচ প্রয়োজন। সেচ প্রদানের পর মাটি দৃঢ় হয়ে গেলে তা নিড়ানি দিয়ে ভালভাবে দৃঢ়তা ভেঙ্গে দিয়ে ঝুরঝুরা করে দিতে হবে। তাতে কন্দের বৃদ্ধি ভাল হবে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। তবে ভাল ফলনের জন্য পেঁয়াজের বেডে কচুরিপানা দিয়ে মালচ প্রদান করা যেতে পারে। এতে জমিতে সেচ কম লাগে। গাছের গোড়া সব সময় ঝুরঝুরে মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পেঁয়াজের কন্দ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফুলের কলি দৃষ্টিগোচর হওয়া মাত্রই তা ভেঙ্গে দিতে হবে। পেঁয়াজ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। সুতরাং পেঁয়াজের জমিতে পানি নিকাশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
পিয়াজ তোলার ১৫ দিন পূর্ব থেকে সেচ বন্ধ রাখতে হবে। আগাছা দেখা যাওয়ার সাথে সাথে নিড়ানি দিয়ে আগাছা উপড়িয়ে ফেলতে হবে। আগাছা নিড়ানো, পিয়াজের গোড়ার মাটি একটু আলগা ঝুরঝুরা করার কাজ একই সাথে করতে হবে।
রোগ ও পোকা দমন
পিয়াজে গোড়া পচা
পাতা পূর্ণতা প্রপ্তির আগেই ডগার দিক থেকে শুকাতে থাকে এবং ঝিমিয়ে পড়ে। শিকড় পচে যায়, গোলাপী বর্ণ ধারন করে এগুলোর আক্রমন যাতে না হয় সেরূপ ব্যবস্থা আগে থেকেই নিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধি জাত লাগাতে হবে। প্রয়োজনবোধে ৩.৫ কেজি ডাইথেন এম-৪৫ ঔষধ ১০০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে হবে।
পারপল ব্লচ
আক্রান্ত গাছের পাতা ও পুষ্পদন্ডে কেন্দ্রে গোলাপী রং যুক্ত ছোট ছোট বসে যাওয়া সাদাটে দাগ দেখা যায়। দাগের চারদিকের কিনারা লালচে বলয়যুক্ত। আক্রান্ত পাতা কুঁকড়ে যায়, হলুদ হয়ে শুকিয়ে যায়। গুদামে কন্দের পচন দেখা যায়।
থাইরাম বা ক্যাপটেন ২ গ্রাম/কেজি দিয়ে বীজ শোধন, এবং গাছে ম্যানকোজেব বা জিনেব ২.৫ গ্রাম/লিটার দ্বারা ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
এছাড়াও পিয়াজে থ্রিপস ও জাব পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে। এগুলোর আক্রমন প্রতিহত করার জন্য ম্যালাথিয়ন-৫৭ ইসি- ১.১২ লিটার বা ফাইফানল- ৫৭ ইসি- ১.৭ লিটার বা এনথিয়ন – ২৫ ইসি-১.১২ লিটার ১০০০ লিটার পানির সাথে মিশিয়ে এক হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে হবে (যেকোন একটি ঔষধ নির্দিষ্ট পরিমানে)।
পিয়াজের কিছু সংখ্যক গাছ ফুল উৎপাদন করে। কলি দেখা মাত্র ফুলের ডাটা ভেঙ্গে দিতে হবে। তবে বীজের জন্য পিয়াজ চাষ করলে ফুলের কলি ভাঙ্গা যাবেনা।
ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
ফসল সংগ্রহ
পেঁয়াজ উত্তোলনের ১মাস পূর্বে জমিতে সেচ দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে। চারা থেকে কন্দের পরিপক্কতা পর্যন্ত পেঁয়াজ এর মাত্র ৫০-৭০ দিন সময় লাগে এবং বাল্ব থেকে বাল্ব পরিপক্ক হতে ১১০-১২০ দিন সময় লাগে। উজ্জ্বল রৌদ্রযুক্ত দিনে পেঁয়াজ উত্তোলন করলে সংরক্ষণ ভাল হয়। পেঁয়াজ গাছ পরিপক্ব হলে পাতা ক্রমান্বয়ে হলুদ হয়ে হেলে পড়ে। জমির প্রায় ৭০-৮০% গাছের এ অবস্থা হলে পেঁয়াজ তোলার উপযোগী হয়। বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত প্রায় ৯৫-১১০ দিন সময় লাগে। পেঁয়াজ উঠানোর পর মূল ও পাতা কেটে বায়ু চলাচল যুক্ত ঠান্ডা ও ছায়াময় স্থানে ২-৩ দিন রাখতে হবে। এরপর বাছাই ও গ্রেডিং করার পর বাঁশের মাচা বা পাকা মেঝেতে সংরক্ষণ করা যায়।
ফলন
গ্রীস্মকালীন পেঁয়াজ (বারি পেঁয়াজ-২ ও ৩) ফলন হেক্টরপ্রতি ১০-১৩ টন এবং দেশী জাতের পেঁয়াজের ফলন ১২-১৬ টন হয়ে থাকে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণ
পেঁয়াজ শুধুমা্ত্র শীতকালে চাষাবাদ করে উৎপাদিত পেঁয়াজ সারা বছর খাওয়া হয়। ফলে এর সংরক্ষণও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশীয় পদ্ধতিতে সাধারণত তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় পেঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা কঠিন। এক্ষেত্রে দেশীয় পদ্ধতি সংরক্ষণের জন্য মোটেই উপযুক্ত নয়। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের শতকরা ৯০ ভাগই দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের পোষ্টহারভেষ্ট টেকনোলজি বিভাগ দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের কয়েকটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। এ পদ্ধতি সুষ্ঠুভাবে প্রয়োগ করে পেঁয়াজের সংরক্ষণকালীন অপচয় অনেকাংশেই কমানো সম্ভব। সংরক্ষণের উপযোগী জাত নির্ধারণ থেকে শুরু করে সংরক্ষণের ধাপগুলো নিম্নরুপঃ
১) সংরক্ষণের জন্য কম আর্দ্রতাবিশিষ্ট, বেশি ঝাঁঝালো (তাহেরপুরী, ঝিটকা জাত), উজ্জ্বল ত্বক, এবং বেশিসংখ্যক ত্বক বিশিষ্ট জাতের পেঁয়াজই উপযুক্ত।
২) চাষের জন্য রোগ ও ক্রটিমুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে।
৩) ক্ষেতে অতি মাত্রায় সেচ দেওয়া যাবে না।
৪) ক্ষেতে মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া দেয়া যাবে না।
৫) গাছের পুষ্টতা এসে গেলে পেঁয়াজের ডগা অর্থাৎ গলার দিকের ‘টিস্যু’ নরম হয়ে যায়। ফলে পাতা হেলে পড়ে। ফসলের প্রায় ৭০-৮০% গাছের পাতা এভাবে নিজে নিজেই ভেঙ্গে গেলে পেঁয়াজ সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। পেঁয়াজ সংগ্রহের সময় খেয়াল রাখতে হবে যাতে গায়ে ক্ষতের সৃষ্টি না হয়।
৬) পেয়াজ সংগ্রহের পর ৫-৭ দিন ঘরে ১০-১২ সে.মি. পুরু করে বায়ু চলাচল সুবিধাযুক্ত, শীতল ও ছায়াময় স্থানে শুকিয়ে নিতে হয়।
৭) সংরক্ষণের পূর্বে পেঁয়াজ কাটা ছেঁড়া, পঁচা, ছোট-বড়, দোডালা ইত্যাদি অনুযায়ী বাছাই ও শ্রেণীবিন্যাস করা হয়।
৮) পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষণস্থল ও মাচার প্রকৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাশেঁর পাতলা চটা (বেতী), সুতলী দিয়ে গেঁথে তৈরি ‘বানা’-এর উপর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করাই উত্তম। ঘরের সিলিং-এ বাঁশের মাচা তৈরি করে তার উপর বানা বিছিয়ে পেঁয়াজ রাখতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণীর পেঁয়াজ আলাদা আলাদা জায়গায় সংরক্ষণ করা উচিত। টিনের ঘরের সিলিং-এ পেঁয়াজ রাখলে তা ২০-২৫ সে.মি. পুরু করে রাখা যাবে। খড়ের বা টালির সিলিং-এ পেঁয়াজ ১৫-২০ সে.মি. এর বেশি পুরু করে না রাখাই ভালো। মেঝের দুই ফুট উপরে তৈরি মাচায় রাখার চেয়ে সিলিং-এ পেঁয়াজ রাখাই উত্তম। কারণ প্রথমোক্ত স্থানের চারদিকে সাধারণত বায়ু চলাচল কম থাকে। যদি মেঝের দুই ফুট উপরে নির্মিত মাচায় পেঁয়াজ রাখতেই হয়, তবে তা ১০-১৫ সে. মি. এর বেশি পুরু করে না রাখাই ভালো।
৯) মাঝে মাঝে সংরক্ষিত পেঁয়াজ নাড়া দিতে হবে এবং পঁচা পেঁয়াজ বাছাই করতে হবে। বাদলা দিনে বিশেষভাবে পেঁয়াজের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ শুকায় না , যার ফলে পেঁয়াজ পঁচতে শুরু করে। এ অবস্থায় প্রয়োজনে পেঁয়াজ মাচা থেকে নামিয়ে ছায়ামুক্ত স্থানে পাতলা করে বিছিয়ে শুকিয়ে নিয়ে মাচায় উঠাতে হবে
বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ
বীজ উৎপাদনের জন্য বর্ষাকালে উৎপাদিত রোগমুক্ত শল্ককন্দ ব্যবহার করা হয়। রোগমুক্ত শল্ক কন্দ থেকে শীতকালে বীজ উৎপাদন করা হয়। পেঁয়াজ সাধারণত পরপরগায়িত ফসল। সেজন্য বীজ ফসলের ক্ষেত্রে ১০০০-২০০০ মিটারের মধ্যে অন্য কোন পেঁয়াজ জাত থাকা ঠিক নয়। পেঁয়াজ এর বীজ ফসল আবাদের জন্য সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দুরত্ব ২০ x ১৫ সে. মি. হলে ভাল হয়। খরিপ পেঁয়াজের শল্ককন্দ উৎপাদনের জন্য যে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয, বীজ উৎপাদনেও সে পরিমাণ সারের প্রয়োজন হয়। বীজ ফসলের জমিতে সর্বদা ভাল রস থাকতে হবে। সাধারণত মধ্য অক্টোবরের মধ্যে পেঁয়াজ রোপন করা হয়। গাছে ফুলের কলি আসার পর হেক্টর প্রতি অতিরিক্ত ১০০ কেজি ইউরিয়া ও ১০০ কেজি এম.পি সার জমিতে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। কন্দ সব সময় ঝুরঝুর মাটি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। অক্টোবর মাসে রোপন করলে ডিসেম্বর মাসে ফুল আসে, ফুল দেখতে সাদা রংয়ের এবং ছাতার মতো। প্রতি গাছে ১-৭ টি পর্যন্ত ফুলধারণকারী কান্ড থাকে। প্রতিটি ফুলে ১৫০-৪০০ টি বীজ পাওয়া যায়। প্রতি ১০০০ টি শুকনো বীজের ওজন ২-৩ গ্রাম। বীজ সংগ্রহ করতে ১৪০-১৬০ দিন সময় লাগে। যেহেতু পেঁয়াজের সকল বীজের পরিপক্কতা একসাথে হয় না। সেই জন্য কয়েক ধাপে বীজ সংগ্রহ করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করার পর ভালভাবে রোদে শুকিয়ে মাড়াই করে পরিস্কার করে আর্দ্রতা রোধক পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। হেক্টর প্রতি ৫০০-৮০০ কেজি বীজ উৎপাদন সম্ভব। দেশী পেঁয়াজের বেলায় বীজের উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৮০০-১০০০ কেজি হয়।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন ও কন্দ সংরক্ষণের জন্য নিম্নলিখিত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে।
১। পেঁয়াজ সংগ্রহের ৫০ দিন পূর্বে ম্যালিক হাইড্রাজাইড (১০০০ পিপিএম) পাতায় স্প্রে করলে পেঁয়াজের সংরক্ষণ গুণ বাড়ে।
২। পেঁয়াজের কন্দ ২০০ পিপিএম GA3 দ্রবনে সারারাত ভিজিয়ে রেখে রোপন করে বীজ উৎপাদন বাড়ানো যায়।
৩। ১০ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রায় পেঁয়াজের কন্দ সংরক্ষণ করে বীজ উৎপাদন বাড়ানো যায়।
৪। বীজ উৎপাদনের জন্য সবসময় বড় আকারের (১০-১৫ গ্রাম) কন্দ ব্যবহার করতে হবে।
৫। কচুরীপানা মালচ ব্যবহার করে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন বাড়ানো
1 Comments
Pingback: Police Clearance পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিক - BestIncomeidea.com