অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বা অ্যাফিলিয়েশন হচ্ছে এমন একটি মার্কেটিং সিস্টেম, যার মাধ্যমে আপনি আনলাইনে ঘরে বসে আয় করতে পারেন।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে মানুষ অনেক বেশি প্রজুক্তি নির্ভর।
বাজারে গিয়ে দরদাম করা বা পণ্যগুলো হাতে নিয়ে বাড়িতে আসার চাইতে তারা ইন্টারনেটে পণ্য কেনার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। আর সে ক্ষেত্রে তারা ফ্রি ডেলিভারিসহ আরও নানা রকম সুবিধা পেয়ে থাকে।
যেই ওয়েবসাইট গুলো থেকে তারা পণ্য ক্রয় করে সেইগুলার বেশিরভাগই পন্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে এফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে যেই ক্ষেত্রে যেকোনো লোক কমিশনের ভিত্তিতে তাদের পন্যের ক্রেতা জোগান বা বিক্রির ব্যবস্থা করে থাকে।
আর এই ধরনের সাইটগুলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রসারিত আর বৃহৎ সাইট হচ্ছে আমাজন।
প্রথমেই জানা যাক অ্যাফিলিয়েশন বিষয়টি কী?
প্রযুক্তিনির্ভর এই বিশ্বে মানুষের কেনাকাটার জন্য এখন আর বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই।
বাসা বা অফিসে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ই কমার্স সাইট থেকে কেনাকাটা করতে পারেন।
অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য ক্রেতার হাতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেয় ইকমার্স প্রতিষ্ঠান।
ই কমার্স সাইটগুলো তাদের পণ্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে অ্যাফিলিয়েট সুবিধা দিয়ে থাকে। আর মার্কেটাররা এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা মার্কেটিং করে আয় করে। এটাই হলো অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
সহজে বলা যায়, আপনি অনলাইনে কোনো পণ্য বিক্রি করতে চাইলে সে প্রতিষ্ঠান আপনাকে তাদের পণ্যের একটা লিংক দিবে। আপনার দেয়া লিংকের মাধ্যমে কোন গ্রাহক যদি তাদের ওয়েবসাইটে ঢুকে এবং পণ্য ক্রয় করে, তাহলে ওই প্রতিষ্ঠান আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কমিশন দেবে। এই কমিশনের মাধ্যমে অর্থ আয় করার মাধ্যকেই বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
আর তা-ই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যুক্ত হওয়ার লিঙ্ক পাওয়া যাবে এ সাইটে : affiliate-program.amazon.com.
অনেকেই হয়তো নিজেদের ওয়েবসাইটের জন্য ডোমেইন হোস্টিং কিনে থাকেন। বিশ্বব্যাপী বহুল পরিচিত একটি হোস্টিং কোম্পানি হচ্ছে হোস্টগেটর (hostgator.com)।
যদি হোস্টগেটরের হোস্টিং আপনি কোনো মাধ্যমে বিক্রি করাতে পারেন, তাহলে প্রতিটি বিক্রির জন্য হোস্টগেটর আপনাকে কমিশন দেবে। আর এ ধরনের মার্কেটিং করাই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিশ সাইট থেকে আয় করবেন যেভাবে
নিশ সাইটের জন্য যা দরকার:
- কি-ওয়ার্ড রিসার্চ
- একটি ডোমেইন নাম নির্বাচন করা ও হোস্টিং সেট আপ
- ওয়ার্ডপ্রেস ইনস্টল
- মানসম্মত কনটেন্ট
- ভাল মানের ব্যাকলিংক তৈরি করা
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- দরকারি পেজ সেটআপ
- কাঙ্খিত কনভার্সন রেট
হোস্টগেটরের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যুক্ত হওয়ার লিঙ্ক পাওয়া যাবে এ সাইটে : www.hostgator.com/affiliates
যদি বাংলাদেশের একটি ওয়েরসাইট টেমপেস্নট তৈরি করে এমন একটি কোম্পানি জুমশেপারের (joomshaper.com) ওয়েবসাইট ভিজিট করেন, তাহলে দেখা যাবে এখান থেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের জন্য থিম/টেমপ্লেট, প্লাগইন কেনা যায়।
এখন এই থিম/টেমপ্লেট, প্লাগইন যদি আপনার মাধ্যমে বিক্রি হয় তাহলে জুমশেপার আপনাকে কমিশন দেবে।
আর এই কমিশন পাওয়ার জন্য মার্কেটিং করাই হচ্ছে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
জুমশেপারের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে যুক্ত হওয়ার লিঙ্ক পাওয়া যাবে এ সাইটে : joomshaper.com/ affiliate/affiliates/
এভাবে বিশ্বের পায় প্রতিটি কোম্পানিরই অ্যাফিলিয়েট পণ্য রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি আয় করতে পারেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে কী কী দরকার?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং মূলত অনলাইন মার্কেটিং। তাই আপনাকে কমপিউটার, ইন্টারনেট এবং ইংরেজিতে দক্ষ হতে হবে। ইন্টারনেট মার্কেটিং সম্পর্কে (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, ই-মেইল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং) ভালো ধারণা নিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শুরম্ন করলে ভালো হবে।
ভালো ইংরেজি জানলে আর ঠিকমতো কাজ করলে পাঁচ থেকে সাত মাসের ভেতরেই আপনি দক্ষ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শেখার জন্য যেসব বিষয় আপনাকে শিখতে হবে তা হলো :
* সাবলীল ইংরেজি লেখার ক্ষমতা।
* বস্নগ তৈরি ও তা রক্ষণাবেক্ষণ জানা।
* বস্নগ প্রমোশনের বা মার্কেটিংয়ের জন্য সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) শিখতে হবে।
* সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং জানতে হবে।
* ই-মেইল মার্কেটিংয়ে দক্ষতা থাকতে হবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং যেভাবে করবেন
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং অনেকভাবে করা যায়।
যেমন কোনো একটি রিভিউ সাইট তৈরি করে এরপর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের মাধ্যমে ভিজিটর জেনারেট করে অথবা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা ই-মেইল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে।
প্রোডাক্ট রিভিউ সাইট অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংওয়র অন্যতম একটি মাধ্যম।
একটি জরিপে দেখা যায় :
* ৮৩ শতাংশ ভোক্তা বলেছেন প্রোডাক্ট রিভিউ তাদের পার্সেজ ডিসিশনকে প্রভাবিত করে।
* ৭০ শতাংশ ক্রেতা কেনার আগে অনলাইনে প্রোডাক্ট রিভিউ খোঁজেন।
* প্রায় অর্ধেকেরও বেশি ক্রেতা প্রোডাক্ট রিসার্চের অংশ হিসেবে সার্ভে এবং ভোক্তাদের রিভিউ পড়ে থাকেন।
* প্রায় ১০ জনের মধ্যে ৯ জন মার্কিনি কেনার আগে কোনো না কোনো সময় প্রোডাক্ট রিভিউ পড়ে থাকেন।
সাধারণত দেখা যায়, একজন ক্রেতা একটি পণ্য কেনার আগে সে সম্পর্কে অনলাইনে জানতে চান। যেমন একজন ব্যক্তি একটি Folding Bike কিনতে চান। সাধারণত বাইকটি কেনার আগে সে এটি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তখন তিনি হয়তো গুগল বা ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ দেন Best Folding bike, Folding bike review, Folding bike price, Folding bike price in usa এসব কিওয়ার্ড লিখে। নির্দিষ্ট কিওয়ার্ডের জন্য আপনার প্রোডাক্ট রিভিউ সাইটটি যদি বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনের প্রথমে নিয়ে আসতে পারেন, তাহলে প্রোডাক্ট অ্যাফিলিয়েটের মাধ্যমে ভালো পরিমাণ টাকা আয় করতে পারবেন।
কয়েকটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সাইট
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের অনেক বড় বড় সাইট বা নেটওয়ার্ক রয়েছে, যেগুলো থেকে সাইনআপ করে আপনি বিভিন্ন অ্যাফিলিয়েট প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারেন।
বিশ্বের বড় কয়েকটি অ্যাফিলিয়েট নেটওয়ার্ক হচ্ছে :
কমিশন জাংশন commissionjunction.com
ক্লিকব্যাংক http://www.clickbank.com/
ওয়ান নেটওয়ার্ক ডিরেক্ট onenetworkdirect.com
লিঙ্কশেয়ার http://www.linkshare.com/
অ্যামাজন http://www.amazone.com/
কমিশন সোআপ commissionsoup.com/
শেয়ারএসেল shareasale.com/
ওয়ারিয়রপস্নাস warriorplus.com/
অ্যাফিলিয়েটউইন্ডো affiliatewindow.com/
বেকলিংক www.bestearnidea.com
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কোথায় শিখবেন?
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে ইন্টারনেট মার্কেটিংয়ের অনেক কিছু জানতে হবে এবং প্রচুর পড়াশোনা করা দরকার।
ইন্টারনেটে সার্চ করে বিভিন্ন লেখকের লেখা পড়ে, তাদের পিডিএফ বই পড়ে বা ভিডিও দেখেও আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং শিখতে পারেন। তবে ইন্টারনেট থেকে শিখতে প্রচুর সময় নষ্ট হতে পারে সরাসরি গাইডলাইনের অভাবে।
কারণ আপনি ভালো রিসোর্স কোথায় আছে জানেন না এবং ইন্টারনেটে সার্চ করে সবকিছু পাওয়া অনেক দুরূহ ব্যাপার।
হাতে-কলমে শেখার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং প্রফেশনালি কেউ করছে তার কাছ থেকে বা ভালোমানের কোনো প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটেরও দারস্থ হতে পারেন, যারা দ্রুত আপনাকে একজন সফল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে কাজের সম্ভাবনা
অনলাইনে টাকা আয়ের সবচেয়ে বড় যে উপায়, সেটিই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, শুধু অ্যাফিলিয়েট মাকের্টিংয়ের মাধ্যমে মার্কেটারেরা আয় করেছেন ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিশাল এই বাজারের ১ শতাংশও যদি আমরা ধরতে পারি, তাহলে প্রতিবছর দেশে আসবে ৬০০ কোটি টাকা। এই জায়গাটিতে পৌঁছানো খুব একটা কঠিন হবে না, যদি উপযুক্ত ট্রেনিং নিয়ে দক্ষতা অর্জন করা যায়।
আবার রিভিউ ব্লগ লিখে অ্যাফিলিয়েট মাকের্টিংয়ের ওয়েবসাইটে গুগল অ্যাডসেন্সসহ বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের মাধ্যমেও নিজের সাইট থেকে আয় করা যায়। এখান থেকেই আমাদের তরম্নণদের কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে এখন এমন অনেক অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার রয়েছেন, যারা ব্লগ লিখে মাসে আয় করছেন ৩ থেকে ৮ হাজার ডলার পর্যন্ত
আপনারা যদি অনলাইন ইনকাম সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে
আমার সাথে যোগাযোগ করুন Contact On Facebook