কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মাঝে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবেনা’’।
‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের আলামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে সুদের প্রসার লাভ করবে’’।
বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ূ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। অগণিত সংখ্যক মুসলমান আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অমান্য করে সুদের ব্যবসায় লিপ্ত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে এমন কোন ইসলামী দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে সুদী ব্যাংক নেই বা সুদের ব্যবসা নেই।
১৮- দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে
উপরের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিবরীল ফেরেশতার প্রশ্নের উত্তরে বলেছেনঃ ‘‘যখন তুমি দেখবে দাসী তার মনিবকে জন্ম দিচ্ছে তখন কিয়ামত নিকটবর্তী বলে মনে করবে’’। ‘‘দাসী তার মনিবকে প্রসব করবে’’
এ কথাটির ব্যাখ্যায় আলেমগণ কয়েকটি উক্তি করেছেনঃ
(ক) ইসলাম অচিরেই বিস্তার লাভ করবে। মুসলমানদের হাতে কাফের-মুশরেকদের স্ত্রী-সন্তান বন্দী হয়ে দাস-দাসীতে পরিণত হবে।
কোন ব্যক্তি তার ভাগে প্রাপ্ত দাসীর সাথে সহবাস করার কারণে দাসী গর্ভবতী হয়ে সন্তান প্রসব করবে।
উক্ত ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করার পর দাসীর গর্ভের সন্তান দাসীর মালিক হবে। মৃত্যুর পর পিতার সম্পদ ছেলের সম্পদে পরিণত হয়।
এমতাবস্থায় সন্তান তার মায়ের সাথে আপন দাসীর ন্যায় ব্যবহার করবে।
(খ) আখেরী যামানায় সন্তানেরা পিতা-মাতার অবাধ্য হবে। দাসীকে যেমন তার মনিব প্রহার করে, গালি দেয়, কষ্ট দেয়, সন্তানও তার মায়ের সাথে অনুরূপ ব্যবহার করবে। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারীতে এমতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন।
সে হিসেবে এই আলামতটি আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।
এমন কোন গ্রাম বা অঞ্চল পাওয়া যাবেনা যেখানে সন্তানেরা পিতা-মাতার সাথে অসৎ ব্যবহার করেনা।
এই মর্মে সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। এই হাদিসের অর্থের ব্যাপারে আলেমগণের একাধিক অভিমত পাওয়া যায়।
ইবনে হাজার যে অর্থটি নির্বাচন করেছেন সেটি হচ্ছে- সন্তানদের মাঝে পিতামাতার অবাধ্যতা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়া।
সন্তান তার মায়ের সাথে এমন অবমাননাকর ও অসম্মানজনক আচরণ করা যা একজন মনিব তার দাসীর সাথে করে থাকে।
১৯- সময় দ্রুত চলে যাবে
কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে বলে মনে হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
‘‘সময় ছোট হয়ে যাওয়ার পূর্বে কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা। এক বছরকে একমাসের সমান মনে হবে। এক মাসকে এক সপ্তাহের সমান মনে হবে। এক সপ্তাহকে একদিনের মত মনে হবে এবং এক দিনকে এক ঘন্টার সমান মনে হবে’’।
আলেমগণ সময় খাটো হয়ে যাওয়ার কয়েকটি অর্থ করেছেন।
(১) সময় ছোট হয়ে যাওয়ার অর্থ হলো সময়ের বরকত কমে যাওয়া। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ আমাদের সময়ে এই আলামতটি প্রকাশিত হয়েছে। সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে। অথচ আমাদের যুগের পূর্বে এ রকম মনে হতোনা।
(২) কেউ কেউ বলেছেনঃ ইমাম মাহদীর যুগে এটি সংঘটিত হবে। কেননা তখন মানুষের মাঝে চরম সুখণ্ডশান্তি বিরাজ করবে। কারণ সুখণ্ডশান্তি ও আনন্দের মুহূর্তে সময় দীর্ঘ হলেও খাটো মনে হয়। আর দুঃখণ্ডকষ্টের মুহূর্তে সময় অল্প হলেও তা অনেক লম্বা মনে হয়।
(৩) কেউ কেউ বলেছেনঃ কিয়ামতের পূর্বে প্রকৃতভাবেই সময় খাটো হয়ে যাবে এবং তা দ্রুত চলে যাবে। সে হিসেবে এই আলামতটি এখনো আসেনি। তবে কিয়ামতের পূর্বে তা অবশ্যই আগমণ করবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী বাস্তবে রূপ নিবে।