যদিও আমরা প্রতিদিন অসংখ্য ওয়েবসাইট ব্রাউজ করি, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, একটি ওয়েবসাইট কীভাবে কাজ করে কিংবা একটি ওয়েবসাইট কি কি দিয়ে তৈরি তা জানি না আমরা। জানা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় তা যথেষ্ঠ নয়। আর তাই, চলুন জেনে নেওয়া যাক একটি ওয়েবসাইট কি কি দিয়ে তৈরি তার বিস্তারিত!
টিম বার্নাস লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আবিষ্কারের পর থেকেই আমাদের জীবনের অব্বিছেদ্য অংশ হয়ে গেছে ওয়েবসাইট নামের জিনিষগুলো। আর তাই .com, .net কিংবা .me এর মতো শব্দ গুলোর সাথে আমরা বেশ ভালভাবেই পরিচিত হয়ে গেছি বলতে গেলে। প্রতিদিনই এসব শব্দ যুক্ত কোন না কোন ওয়েবসাইট আমরা ব্রাউজ করিই। যেমনঃ ফেসবুক ডট কম, প্রথমআলো ডট কম ইত্যাদি।
১। ডোমেইন নামঃ
প্রথমত, একটি ডোমেইন নাম প্রয়োজন হয় একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে। প্রতিটি ডোমেইন নাম হচ্ছে মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট এর মতই ইউনিক। অর্থাৎ কোন একটি ডোমেইন নাম শুধু মাত্র একজনের মালিকানাতেই থাকা যাবে। প্রতিটি ডোমেইন নাম এর শেষে থাকে একটি করে এক্সটেনশন। বর্তমানে অসংখ্য এক্সটেনশন প্রচলিত আছে, যেমনঃ .com, .net, .me, .io, .tech, .blog ইত্যাদি। অথব এই যেমন, কানাগলি ওয়েবসাইটটি .com এক্সটেনশন ব্যবহার করছে।
ডোমেইন নাম মূলত কিনে নিতে হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডোমেইন নাম বিভিন্ন মূল্যে বিক্রি করে থাকে। যেমন, নেইমচিপ প্রায় ১১ ডলার বা ৯০০ টাকায় একটি ডোমেইন নাম বিক্রি করে থাকে। আবার অন্যদিকে গোড্যাডি ১২ ডলার বা ৯৮০ টাকা (প্রায়) দিয়ে বিক্রি করে থাকে। আর এই ডোমেইন কেনা-বেচার কাজটি পুরোপুরি তদারকি করে থাকে The Internet Corporation for Assigned Names and Numbers (ICANN), যেটিকে প্রতিটি ডোমেইন নাম এর বিনিময়ে ১৮ সেন্ট বা ১৬ টাকা দিতে হয়। তবে কিছু ডোমেইন নাম আপনি কিনতে পারবেন বিনামূল্যে। যেমনঃ .tk এক্সটেনশন এর ডোমেইন নামগুলো।
২। হোস্টিংঃ
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা কখনোই সম্ভব নয় ওয়েব হোস্টিং ছাড়া। ওয়েব হোস্টিং এর কাজ মূলত হচ্ছে ব্রাউজার একটি ওয়েবসাইটের যে লেখা,ভিডিও বা ছবি অর্থ্যাৎ কনটেন্ট গুলো প্রদর্শন করে সেগুলো জমা রাখা। আর ওয়েব হোস্টিং কে তাই চাইলেই তুলনা করা যায় পাওয়ার হাউজের সাথে।
একটি ওয়েবসাইটের সাথে অন্যতম প্রধান যে বিষয়গুলো জড়িত থাকে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
১। ডিস্ক স্পেস
২। ব্যান্ডউইডথ এবং
৩। কন্ট্রোল প্যানেল
ডিস্ক স্পেস বলতে মূলত কতটুকু স্টোরেজ বা সহজে বলতে গেলে কত মেগাবাইট বা কত গিগাবাইট ডেটা জমা রাখতে পারবে। আর ব্যান্ডউইডথ বলতে বুঝায় প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমানে ডেটা ট্রান্সফার করতে পারে সে বিষয়টিকে। সবশেষে কন্ট্রোল প্যানেল বলতে একটি ওয়েবসাইটের হোস্টিং ম্যানেজম্যান্ট এর কাজটি যেখান থেকে করা হয় সেটিকে বুঝানো হয়।
হোস্টিং মূলত কিনে ব্যবহার করতে হয়। শেয়ার্ড, ভার্চুয়াল প্রাইভেট সার্ভার এবং ডেডিকেটেড হোস্টিং নামের তিনটি প্যাকেজ মূলত কিনতে পাওয়া যায়। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়েব হোস্টিং অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ডিস্ক স্পেস এবং ব্যান্ডউইডথ নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকে।
আরও দেখুনঃ SSL Certificate কি?
৩। ওয়েব সার্ভার টুলসঃ
একটি ওয়েব হোস্টিং অ্যাকাউন্টের সাথে বিভিন্ন ওয়েব হোস্টিং টুলস যুক্ত থাকে। কারন কিছু উচ্চ শ্রেনীর কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ কিছু সুনির্দিষ্ট সহায়ক প্রোগ্রাম ছাড়া কাজ করতে পারে না। আর তাই, উচ্চ শ্রেনীর ল্যাঙ্গুয়েজ যেমনঃ পিএইচপি দ্বারা চালিত ওয়েবসাইটগুলোকে টুলসগুলো সচল রাখে।
সাধারনত একটি ওয়েব হোস্টিং অ্যাকাউন্ট এর সাথে অ্যাপাচে বা এনজিআইএনএক্স দেওয়া থাকে যা কাজ করে সার্ভার হিসেবে। মাইএসকিউএল ডেটাবেজ সফটওয়্যার, পিএইচপি মাই অ্যাডমিন ইত্যাদি কাজ করে সেই সার্ভারে ডেটাবেজ তৈরি ও ম্যানেজম্যান্ট এর টুল হিসেবে।
মূলত অ্যাপাচে বা এনজিআইএনএক্স এর কাজ হচ্ছে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোকে সচল রাখতে সহায়তা করা। আর মাইএসকিউএল কাজ করে ডেটাবেজ তৈরি করার কাজে যেখানে ওয়েবসাইটের সব তথ্য জমা রাখা হয়। অন্যদিকে, পিএইচপি মাই অ্যাডমিন এর কাজ হচ্ছে ডেটাবেজ ম্যানেজ করা যেমনঃ ডেটাবেজ এর বিভিন্ন এডিট এর কাজ করা বা ডেটাবেজে নতুন ইউজার যুক্ত করা।
৪। কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজঃ
মূলত একটি ওয়েবসাইট এর পুরোটাই তৈরি করা হয়ে থাকে বিভিন্ন ল্যাঙ্গুয়েজ দ্বারা। যদিও অসংখ্য ল্যাঙ্গুয়েজ রয়েছে, কিন্তু বেসিক ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে ব্যবহার করা হয় এইচটিএমএল। এইচটিএমএল ছাড়া কোন ওয়েবসাইট তৈরি করা কখনোই সম্ভব নয়। এমনকি পিএইচপি বা অন্যান্য কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোকেও ব্যবহার করা সম্ভব না এইচটিএমএল ট্যাগ এর ভেতর না রাখে।
কোডিং ল্যাঙ্গুয়েজ এর মধ্যে পিএইচপি বা রুবির মত ভাষাগুলো সার্ভার ছাড়া ব্যবহার করা সম্ভব নয়। কিন্তু এইচটিএমএল বা সিএসএস এর মতো কোডিং ভাষাগুলো সার্ভার ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।
৫। কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) বা ওয়েবসাইট স্ক্রিপ্টঃ
পৃথিবীর অধিকাংশ ওয়েবসাইটই বর্তমানে বিভিন্ন কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দ্রুপাল বা জুমলার মতো সিএমএস গুলো। ওয়ার্ডপ্রেসকে সবচেয়ে ব্যবহৃত কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বলা হয়ে থাকে, যদিও এটি একটি ব্লগিং স্ক্রিপ্ট। আমাদের কানাগলি ওয়েবসাইটও ওয়ার্ডপ্রেসই ব্যবহার করছে।
ওয়েবে অসংখ্য সিএমএস বা স্ক্রিপ্ট রয়েছে যেগুলো বিনামূল্যে বা টাকার বিনিময়ে ব্যবহার করা যায়। তবে জনপ্রিয় বা বিশেষ প্রয়োজনে তৈরি করা ওয়েবসাইটগুলো তাদের নিজস্ব স্ক্রিপ্ট বা কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (CMS) ব্যবহার করে থাকে।
One Comment
Pingback: ওয়েবসাইট তৈরি করা বা ওয়েবসাইট থাকার গুরুত্ব কি? - বেস্টআর্নআইডিয়া.কম