সদ্য প্রকাশিত ২০১৬ সালের অনুসন্ধান প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবলমাত্র পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তার অভাবেই ৬৩% অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাকড’ হয়।ওয়ান টু থ্রি ফোর ফাইভ সিক্স অথবা নিজের নাম ও জন্মতারিখ – এধরণের সহজ ও বহুল ব্যবহৃত পাসওয়ার্ড দেয়া থেকে বিরত থাকুন। নিজের মতো করে এমন পাসওয়ার্ড সেট করুন যেন কেউ অনুমানও না করতে পারে।
পাসওয়ার্ড একেবারেই ব্যক্তিগত একটি তথ্য। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুুক্তির ব্যবহার এখন সব জায়গায়। আমাদের দেশ ও এর ব্যতিক্রম নয়। এ প্রসার যত বাড়ছে নিরাপত্তার প্রশ্নটি তত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠছে । যত আপন জন হয়ে থাকুক কারো কাছেই পাসওয়ার্ড জানানো যাবে না। শুধু ওয়েবসাইট এর পাসওয়ার্ড ই নয়, সতর্ক থাকতে হবে ব্যাঙ্ক ও মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট এর পিন এর ব্যাপারেও। নিরাপদ পাসওয়ার্ড তৈরির জন্য নিচের বিষয়গুলো অত্যন্ত জরুরী।
বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার:
পাসওয়ার্ড ন্যূনতম ১২-১৫ অক্ষরের ব্যবহার করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে “Brute Force Attack” নামের একটি পদ্ধতিতে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে সব ধরনের পাসওয়ার্ড অনুমান করার চেষ্টা করা হয়। সংক্ষিপ্ত পাসওয়ার্ড এর তুলনায় বড় আকারের পাসওয়ার্ড অনুমান করা কঠিন।
অর্থপূর্ণ নয় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার:
বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হলেই সম্পূর্ণ নিরাপদ, এমন নয়। বরং পাসওয়ার্ড হতে হবে অর্থপূর্ণ নয়, এমন কোন শব্দ।
নম্বর , চিহ্ন ও বিভিন্ন অক্ষর মিলিয়ে রাখা:
পাসওয়ার্ডের শুধু এ থেকে জেড অক্ষর গুলো ব্যবহার না করে , সংখ্যা ও চিহ্ন মিলিয়ে তৈরি করতে হবে।
ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার না করা:
নিজের মোবাইল নম্বর, বাসার ঠিকানা, জন্ম তারিখ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বা পোষা প্রাণীর নাম ব্যবহার করা যাবে না। শুধু নিজেরই নয় আত্মীয়, প্রিয় জন বা পরিবারের কারো এই তথ্যগুলো দিয়ে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত নয়।
একই পাসওয়ার্ড বিভিন্ন সাইটে ব্যবহার না করা:
একটি পাসওয়ার্ড শুধুমাত্র একটি সাইটে ব্যবহার করা উচিত। এবং প্রতিটি একাউন্টের পাসওয়ার্ড নিরাপদ হতে হবে এবং কখনোই কোনো অ্যাকাউন্ট এ সহজে অনুমান করা যায় এমন কিছু ব্যবহার করা যাবে না।
মাঝেমধ্যে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা:
কঠিন কোন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হলেও কিছুদিন পর পর সেটি পরিবর্তন করে নতুন কোন পাসওয়ার্ড নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিশেষত ব্যাংক একাউন্ট এবং অর্থ আদান-প্রদানের অ্যাকাউন্টগুলোর ক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলা উচিত।
লগ আউট করা:
ব্যক্তিগত কম্পিউটার ছাড়া অপর কোন স্থান যেমন অফিস, বিশ্ববিদ্যালয় ম্যাপ থেকে কোন একাউন্টে লগইন করা হলে অবশ্যই খেয়াল করে লগআউট করতে হবে। লগ ইন করা অবস্থায় চলে গেলে অপরকেও একাউন্টে প্রবেশ করে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা সহ আরো নানা রকম ক্ষতি করতে পারে!
টুএফএ ব্যবহার:
পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি টুএফএ। এখন কম-বেশি সব সাইটই টুএফএ তথা টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সাপোর্ট করে – এটি ব্যবহারে কোনো আইডির জন্য পাসওয়ার্ড দেয়ার পর স্বনির্ধারিত মোবাইল বা অ্যাপে একটি তাৎক্ষণিক কোড আসবে। এই কোডটি পুনরায় পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করেই কেবল লগইন করা যাবে। এতে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড কোনোভাবে জেনে গেলেও তা হ্যাক করতে পারবে না।
পাসওয়ার্ড নিরাপদ রাখতে নিম্নলিখিত সামগ্রী পরিপালন করা গুরুত্বপূর্ণ:
1. কোম্পিউটার এবং অ্যাকাউন্ট নিরাপদভাবে লক করুন:
– আপনার কোম্পিউটার এবং মোবাইল ডিভাইসে পাসওয়ার্ড লক সেট করুন।
– অপ্যাপ এবং সেবা ব্যবহার করার সময় লগআউট করুন।
2. কঠিন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
– পাসওয়ার্ড সংরক্ষণের জন্য দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত নয়। দুর্বল পাসওয়ার্ড হলে হ্যাকারদের সাধারণভাবে হ্যাক করা সহজ হতে পারে।
– একটি কঠিন পাসওয়ার্ড অব্যাহতভাবে অক্ষম হওয়া চলতে পারে। একটি ভাল পাসওয়ার্ড সাধারণভাবে দুর্বল না হতে হবে, যেটি ব্যবহারকারীর নাম, জন্মতারিখ, বা সর্বাধিক ব্যবহৃত শব্দ সহ পূর্বের কোনও তথ্য থেকে উত্তেজনা প্রাপ্ত করেনি।
– একটি কঠিন পাসওয়ার্ড সাধারণভাবে অক্ষম হওয়া চলতে পারে, তাও যদি আপনি দ্বিতীয় স্তরের নিরাপদতা প্রয়োজন করেন।
3. স্থির পাসওয়ার্ড না ব্যবহার করুন:
– একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার না করা উচিত।
– প্রতিদিনের সঙ্গে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা গুরুত্বপূর্ণ।
4. দ্বিধাবিধি সংরক্ষণ:
– স্থানীয় ডিভাইসে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ চালিয়ে যাওয়া উচিত।
– পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করা উচিত। এই টুলগুলি কঠিন পাসওয়ার্ড তৈরি এবং সুরক্ষিতভাবে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।
5. দ্বিধাবিধি চেক করুন:
– আপনার অ্যাকাউন্টে দ্বিধাবিধি চেক সক্ষম করুন, যদি সম্ভব হয়।
– যদি একটি অ্যাকাউন্ট অপরটির দ্বিধাবিধি সহ সংযোগিত থাকে, তবে যেটির
পাসওয়ার্ড দ্বিতীয় অ্যাকাউন্টের তার থেকে সংরক্ষণ করা না হয়, তা আরও নিরাপদ হয়।
6. মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (MFA) ব্যবহার করুন:
– সম্প্রতি এই প্রক্রিয়াটি একটি অত্যন্ত নিরাপদ স্কেলে আরোপ্যাড করেছে। MFA ব্যবহার করে আপনি পাসওয়ার্ডের সাথে একটি অতিরিক্ত স্তরের নিরাপদতা সংযোগ করতে পারেন।
পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পাসওয়ার্ডের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সাইবার সুরক্ষা জন্য মৌলিক।