১) সালাম যাকে দিবেন তিনি যদি একাও হন তবুও সালাম দাতা বলবেন, আপনাদের উপর সালাম (আপনার উপর সালাম) একথা বলবে না। ইমাম কুরত্ববী তার তাফছীর গ্রন্থে হজরত আনাস (রাঃ) থেকে একটি বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তুমি যদি কোন একক ব্যক্তিকে সালাম প্রদান কর তখনও বলবে আপনাদের উপর সালাম। কারণ তার সাথে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। আমরা আমাদের সমাজের দিকে তাকালে কোন কোন সময় এই আদবের উল্টা দেখতে পাই। কারণ অনেকে সালাম প্রদান করেন -আপনার উপর সালাম। এ ধরনের সালাম যদি কেহ এই বিশ্বাসে দেন যে, তিনিতো একা, তার সাথে কোন ফেরেশতা নেই বা ফেরেশতা বলতে কিছুই নেই তখন সালামের আদব তো হলোই না বরং সে কবিরা গুনাহ অর্জন করল ।
২)সালাম দাতা ও উত্তর দাতা উভয়ই সালাম উচ্চ স্বরে স্পষ্ট ভাবে দিবেন। যাতে করে উভয়ে শুনতে পান। ইমাম কুরত্ববী তার তাফছীর গ্রন্থে রাসূল (সাঃ) এর একটা হাদিস উল্লেখ করেন যে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা যখন সালাম দিবে তখন এমন ভাবে দিবে যেন সালাম প্রহীতা ভাল ভাবে শুনতে পান। আবার যিনি সালামের উত্তর দিবেন তিনিও এমন ভাবে দিবেন যেন সালাম দাতা সালামের জবাব শুনতে পান। পরিতাপের বিষয় হল আমরা আমাদের সমাজে অত্র হাদিসের পূর্ণাঙ্গ ব্যবহার দেখছিনা বরং কোন কোন ক্ষেত্রে হাদিসের উল্টারূপ দৃষ্টি গোচর হয়। যেমন সালাম দাতা এমন আস্তে সালাম দেন যা শুনা যায় না আবার এও দেখা যায় যে, সালাম মুখে না বলে শুধু হাতের দ্বারা ইশারা করে বুঝাতে চায় যে, তিনি সালাম দিয়েছেন। এতে করে সালাম গ্রহীতা বিভ্রান্ত হন। তাই অনেক সময় সালামের উত্তর থেকে নিজেকে বিরত রাখেন। তখন হতে পারে সালাম দাতা মনে মনে রাগ করেছেন অথবা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করেন। অপর দিকে যদি জবাব দাতা উচ্চ স্বরেও স্পষ্ট ভাবে জবাব না দেন তখনও সালাম দাতা ভুল ধারণা পোষণ করতে পারেন। আবার সালাম দাতা ও জবাব দাতা উভয় যদি এত বেশী উচ্চস্বর ব্যবহার করেন তখন তারা উভয় বিরক্ত বোধ করতে পারেন । অথবা উচ্চ আওয়াজের কারণে আশে পাশের লোক বিরক্ত বোধ করতে পারে বা তাদের কোন প্রকার ক্ষতি হতে পারে । এর কোনটাই ইসলাম ধর্ম সাপোর্ট বা পছন্দ করে না। কাজেই এহেন কাজ থেকে মুক্ত থাকা সকলের জন্য আবশ্যক।
৩) সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে আরো একটি আদব হলো আগে সালাম দেয়ার চেষ্টা করা বা আগে সালাম দেয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করা। অন্যে সালাম দিবে তার জন্য অপেক্ষা না করা । কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যিনি প্রথমে সালাম দেন তিনি আল্লাহর কাছে উত্তম ব্যক্তি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো আমরা অনেকেই সালাম পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করি অথবা অহংকার করে নিজেকে সালাম পাওয়ার অধিকারী বলে দাবী করে। যেমন অফিসের বসকে অধিনস্ত কর্মচারী সালাম দিবে। ছাত্র-শিক্ষককে দিবে, ভারাটিয়া বাড়ীর মালিককে সালাম দিবে, গরীব ধনীকে সালাম দিবে এটাই বর্তমানে আমাদের সমাজে সাধারণ চিত্র হিসেবে পরিগণিত। এ ধরনের অহংকার বোধ একজন মুসলমানের কখনই কাম্য হতে পারে না। মানুষ হিসাবে আল্লাহর কাছে সবাই সমান । আর আল্লাহ পাক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। আল্ল্াহ পাক কুরআন শরীফের সুরা লোকমানের ১৮ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, নিশ্চয় আল্লাহ পাক কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
৪) সালাম প্রদানের আর একটি আদব হলো ছোটরা বড়দের সালাম দিবে। চলমান বা দাড়ানো ব্যক্তি বসা লোককে সালাম দিবে। বাহনে চড়া ব্যক্তি পায়ে হেটে চলা ব্যক্তিকে সালাম দিবে। সংখ্যা লগিষ্ট দল সংখ্যা গরিষ্ট দলকে সালাম দিবে। হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, ছোটরা বড়দের, হেটে চলা ব্যক্তি বসা ব্যক্তিকে, ছোট দল বড় দলকে, বাহনে চড়া ব্যক্তি হেটে চলা ব্যক্তিকে সালাম দিবে।
৫) সালাম প্রদানের আর একটি আদব হল সকল মুসলমান পরস্পরকে সালাম দিবে। চাই সে দেশী হউক কিংবা বিদেশী, শ্বেত হউক কিংবা কালো হউক, পরিচিত হউক অথবা অপরিচিত হউক, আত্মীয় হউক অথবা অনাত্মীয়। কারণ রাসূল (সাঃ) বিশেষ বিশেষ লোক বা বিশেষ বিশেষ অবস্থায় সালাম দিতে নিষেধ করেছেন। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের পূর্বে মানুষ মুখ চিনে বা বিশেষ লোককে সালাম দিবে। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সাঃ) বলেন, কিয়ামতের আলামতের মধ্যে একটি আলামত হল, যখন মানুষ শুধু পরিচিত লোককে সালাম দিবে। আর একটি হাদিসে এসেছে কোন এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেন, ইসলামে উত্তম কাজ কোনটি? তখন রাসূল (সাঃ) উত্তরে বলেন, ইসলামে উত্তম কাজ হলো গরীব অসহায়কে খাবার খাওয়ানো এবং সকলকে সালাম দেয়া। চাই সে পরিচিত হউক অথবা অপরিচিত হউক। অত্র হাদীসের বর্ণনা থেকে বুঝা গেল, গোটা বিশ্বের মুসলমানরা পরস্পর ভাই, জাতি, গোত্র ও দেশ ভেদকে ইসলাম পছন্দ করে না। এই মহৎ উদ্দেশ্যকে বুঝানোর জন্য সালাম সংস্কৃতির ব্যাপক ব্যবহারের প্রতি ইসলাম ধর্ম গুরুত্ব আরোপ করেছে। কাজেই আমরা সকল মুসলমানকে সালাম দিব। অনেক সময় আমাদের সমাজে দেখা যায় দাড়ি টুপি ও লম্বা জামাওলাকে মানুষ বেশী -বেশী সালাম দেয় । প্যান্ট, শার্ট পড়লে তেমন একটা সালাম দেয় না। অন্য দিকে আলেমগণ অনেক সময় মনে করে আমরাই সালামের হকদার তাই মানুষ আমাদেরকে সালাম দিবেন। এ সবই সালামের আদবের খেলাপ। এর মাধ্যমে মানুষের দাম্ভিকতা ও অহংকার বোধের পরিচয় মিলে। কারণ আল্লাহ পাক মানুষের চেহারা সুরাতের দিকে তাকান না বরং আল্লাহ পাক মানুষের অন্তর (কলব) ও আমলের দিকে তাকান। সালামের ব্যাপারে আমাদের সমাজে আর একটি ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। তাহলো মহিলাদের মধ্যে পরস্পরে সালাম বিনিময় খুবই কম হয় । পক্ষান্তারে সালামের হুকুম পুরুষের জন্য যেমন মহিলাদের জন্যও তেমন। বরং আমি মনে করি সালাম প্রথা মহিলাদের মাঝে বেশী প্রচলন হওয়া উচিত। কেননা আমাদের মা বোনদের মাঝে অহংকার বোধ ও ইসলামের অনুশীলন সস্পর্কে উদাসীনতা অনেক ক্ষেত্রে বেশী অনুভূত হয়। আমাদের মাঝে অনেক লোক আছে যারা নারীদের সালাম দেন না আবার অনেক মহিলা আছে যারা পুরুষকে সালাম দেন না কিন্তু নারী-পুরুষ উভয় একে অপরকে সালাম দিতে পারবে। অপরিচিত নারী পুরুষ পরস্পরে যদি কথা বলতে পারে তবে ইসলামের একটি সুন্দর সংস্কৃতি (যা দোয়াও বটে) কেন ব্যবহার করবে না। হ্যাঁ তবে যে ক্ষেত্রে মহিলা পুরুষ সালাম বিনিময় হলে ফেrনার সৃষ্টি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে সালাম দেয়া জায়েজ হবে না। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমরা সন্দেহ যুক্ত কাজ কর্ম ও স্থান থেকে নিজেদেরকে বাঁচাও।মহিলারা পুরুষদের এবং পুরুষরা মহিলাদের সালাম দিতে পারে। তার দলিল হলো: হযরত আসমা আনসারী (রাঃ) বলেন,আমি আমার সাথীদের সাথে বসা ছিলাম এমতাবস্থায় রাসূল (সাঃ) আমাদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি আমাদের সালাম করলেন (আল-আদাবুল মুফরাদ)। অন্য এক বর্ণনায় এসেছে হযরত উম্মে হানী বলেছেন, আমি রাসূল (সাঃ) এর দরবারে হাজির হলাম তখন রাসূল (সাঃ) গোসল করছিলেন। আমি তাকে সালাম করলাম। তখন রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন কে? আমি বললাম উম্মে হানী। তখন তিনি সালামের জবাব দিলেন।
৬) সালামের সাথে জড়িত আর একটি আদব হল, যিনি সালাম দিবেন তিনি বলবেন “আসসালামু আলাইকুম” অর্থাৎ আপনাদের উপর সালাম কিন্তু “আলাইকা সালাম” অর্থাৎ আপনার উপর সালাম” বলবেন না। কারণ এভাবে সালাম দেয়াকে প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনগণ মাকরুহ (অপছন্দনীয়) বলেছেন। কাজী আইয়াদ, ইমাম নববী তার আল-আযকার নামক কিতাবে, ইমাম গাজ্জালী তার এহিয়াউল উলুমে এ ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তাদের পক্ষে যুক্তি হিসাবে রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদিস আছে। হাদিসটি আবু দাউদ এবং তিরমিজী উভয় আবুু জরির থেকে বর্ণনা করেছেন। আবু জরির বলেন, আমি একদা রাসূল (সাঃ) এর খেদমতে হাজির হলাম। তখন আমি তাঁেক আলাইকাস সালাম বললাম। তখন রাসূল (সাঃ) আমাকে বললেন এরূপ বলবে না। কারণ এটা মৃত ব্যক্তির সালাম। কাজেই ইসলামের যে কোন ইবাদাত আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক নির্দেশিত পথে ও তরিকায় আদায় করার চেষ্টা করা দরকার। নিজের মনগড়া কোন পদ্ধতি বা তরিকা গ্রহণ যোগ্য নয়।
৭) সালামের শিষ্টাচার ও ভদ্রতার মধ্যে আর একটি হল আগন্তক ব্যক্তি যখন কোন বাড়ির দরজায় এসে সালাম দিয়ে প্রবেশের অনুমতি চাইবে তখন সে অবশ্যই দরজার ডান পার্শে¦ অথবা বাম পার্শে¦ দাড়াবে। সরাসরি দরজার সম্মুখে দাড়াবে না। যাতে করে অনাকাঙ্খিত কোন বস্তু যার দিকে নজর করা জায়েয নেই তার প্রতি নজর পরে যায়। এর দলিল হিসাবে আবু দাউদে বর্ণিত একটি হাদিস উল্লেখ করতে পারি। আবদুল্লাহ ইবনে বশীর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “রাসূল (সাঃ) যখন কোন বাড়িতে আসতেন তখন দরজার সোজা সরাসরি দাড়াতেন না। দরজার ডান কর্ণারে অথবা বাম কর্ণারে দাড়াতেন ও সালাম দিতেন। এর পরে আব্দুল্লাহ ইবনে বশীর বলেন, রাসূল (সাঃ) এর এভাবে দাড়াবার কারণ ছিল যে, তখনকার সময় দরজায় পর্দা লাগানো ছিলনা । অত্র হাদীসের বর্ণনা মতে, বর্তমান সময়ে যে বাড়ির দরজায় পর্দার কাপড় লাগানো আছে বা এমন কোন সিস্টেম করা আছে (যেমন অটো দরজা) যা খোলার সময় কে খুললেন তাকে দেখা যাবেনা, অথবা ঘরের অন্যান্য মোহরামাত নারীর প্রতি দৃষ্টি পরবে না , তখন সরাসরি দরজায় দাড়িয়ে সালাম দিয়ে অনুমতি নেয়া যাবে। অত্র হাদিস থেকে আরো বুঝা গেল যে, ইসলামের কোন একটি বিধান পালন করতে গিয়ে যদি ইসলামের আর একটি বিধান লঙ্গণ হয় বা এর মাধ্যমে কোন প্রকার ফেৎনার সম্ভাবনা থাকে, তখন এ ধরনের বিধানের আমল থেকে বিরত থাকা যাবে। যেমন মহিলাদের সালাম দিতে গিয়ে যদি তাদের সতরে নযর পরে বা অন্য কোন কু-মতলব মনের মাঝে জেগে উঠে, তখন মহিলাদের সালাম দেয়া যাবেনা, যদিও সালাম একটি সাওয়াব পূর্ণ ইবাদত।
৮) সালামের আর একটি বিশেষ আদব হলোঃ একই ব্যক্তির সাথে বারবার দেখা হলে বার বার সালাম দিবে, যদিও অল্প সময়ের ব্যবধানে দেখা হয়। আবু দাউদে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে। রাসূল (সাঃ) বলেন, যখন তোমাদের সাথে কোন মুসলিম ভাইয়ের দেখা হয়, তখন তাকে সালাম দিবে। এর পর যদি সে কোন গাছের কারণে, দেয়ালের কারণে বা পাথরের কারণে তোমার থেকে অল্প সময়ের জন্য আড়ালে গিয়া আবার তোমার সাথে দেখা করে তখন তাকে আবার সালাম দিবে, ইসলামে এটা কতইনা সুন্দর বিধান। যত বার তার ভাইয়ের সাথে দেখা হবে, ততবার পরস্পরে দোয়া করার একটি সুযোগ করে দিয়েছে এবং সওয়াবেরও বেশী বেশী সুযোগ করে দিয়েছে। সাথে সাথে যত বেশী সালাম বিনিময় করবে ততবেশী ভালবাসা, সহমর্মিতা ও সহবেদনা সৃষ্টি হবে। পক্ষান্তরে আমরা অনেকেই এ বিধান থেকে গাফিল। যেমন একই জায়গায় একই অফিসে বা একই বাড়ি বা ফাটে বসবাসরত লোকজন পরস্পরে সালাম দেয়না বা একবার দিলে কিছুক্ষণ পর আবার দেখা হলে পুনঃরায় সালাম দেয় না। কিন্তু হাদিস থেকে জানা গেল, যখনই দেখা হবে তখনই সালাম দিবে। যতবার রুমে প্রবেশ করবে ততবার সালাম দিবে। অনেকে বার বার সালাম দিতে লজ্জাবোধ করে, অথবা বিরক্ত হবে ভেবে বার বার সালাম দেয়া থেকে বিরত থাকে। এর কোনটাই ঠিক নয়। কারণ ভাল কাজ ও সওয়াবের কাজে লজ্জা বোধ করা মানসিক দুর্বলতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
৯) সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে আর একটি আদব হলো একই মজলিসে যদি জাগ্রত ও ঘুমন্ত লোক থাকে, তখন সালাম প্রদানকারী আস্তে স্বরে সালাম দিবেন ও সালামের উত্তর দাতাও আস্তে স্বরে জবাব দিবেন । যাতে করে ঘুমন্ত ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
১০) যাকে সালাম দিবে তিনি যদি বধির হন তবে ইশারায় সালাম দিবে।্
১১) সালামের সাথে মুসাফাহা (কর মর্ধন) করা ভাল। কারণ এর মাধ্যমে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ পায়। যার কারণে রাসূল (সাঃ) নিজে করেছেন এবং সাহাবাদের করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
১২) সালামের সাথে মুয়ানাক্বা করা যাবে। বিশেষ করে কেহ দীর্ঘ সফর থেকে আসলে মুয়ানাক্বা করা ভাল। কেননা রাসূল (সাঃ) যায়েদ বিন হারেছার সাথে মুয়ানাক্বা করেছেন। তবে এক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয় হলো সুন্দর চেহারার যুবকদের সাথে মুয়ানাক্বা না করাই উত্তম। কারণ এর মাধ্যমে ফেrনার সৃষ্টি হতে পারে।
সালামের জবাব দানের কয়েকটি আদবঃ
সালাম দেয়ার ক্ষেত্রে যেভাবে ভদ্রতা বা আদব রয়েছে তেমনি সালামের জবাব প্রদানেও আছে কিছু আদব।
১) সালাম দাতা যদি একাও হয় তবুও জবাব দাতা বলবেন, “ওয়ালাইকুমুস সালাম ” অর্থাৎ আপনাদের উপর সালাম। আপনার উপর সালাম একথা বলা যাবে না। কারণ সালাম প্রদানকারীর সাথে ফেরেশতারা আছেন। এর দলিল হিসাবে আমরা রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদিস উল্লেখ করতে পারি। যা হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, সালাম যেভাবে বহুবচন শব্দ দ্বারা দিবে তেমনি জবাবও দিবে বহুবচন শব্দ ব্যবহার করে ।
২) সালাম দাতা যেভাবে স্পষ্ট ও উচ্চ স্বরে সালাম দিবেন সেভাবে জবাব দাতাও উচ্চস্বরে স্পষ্ট ভাবে সালামের জবাব দিবেন। রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমরা যখন সালাম দিবে তখন এমন ভাবে দিবে যেন সালাম গ্রহীতা শুনতে পান। আবার যিনি সালামের উত্তর দিবেন তিনিও এমন ভাবে দিবেন যেন সালাম দাতা সালামের জবাব শুনতে পান।
৩) যে কোন মুসলমান সালাম প্রদান করিলে তার সালামের জবাব দিতে হবে। বিশেষ বিশেষ লোক বেচে সালামের জবাব দিবে না। কারণ রাসূল (সাঃ) বিশেষ বিশেষ লোককে সালাম দিতে নিষেধ করেছেন। এই দলিলের ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি সালামের জবাবও বেচে বেচে দেয়া যাবে না। সবার সালামের জবাব দিবে।
৪) কেহ বার বার সালাম দিলে জবাবও বারবার প্রদান করতে হবে। এ ব্যাপারে কোন প্রকার কৃপণতা বা বিরক্তি বোধ করা যাবে না। আবু দাউদে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে, যখন তোমাদের সাথে কোন মুসলিম ভাইয়ের দেখা হবে, তখন তাকে সালাম দিবে। এরপর যদি সে কোন গাছের কারণে , দেয়ালের কারণে বা পাথরের কারণে তোমার থেকে অল্প সময়ের জন্য আড়ালে গিয়া আবার তোমার সাথে দেখা করে তখন আবার সালাম দিবে” অত্র হাদীসের দ্বারা যখন বার বার সালাম দেয়ার ঘোষণা পাওয়া গেল তখন অবশ্যই সালামের জবাবও বারবার দিতে হবে।
৫) সালামের জবাব সালাম শব্দ দ্বারাই দিবে। যদিও সালাম শব্দের সাথে আরো কিছু বৃদ্ধি করে বলা উত্তম। তবে সালাম শব্দ বাদ দিয়ে অন্য কোন শব্দ দ্বারা জবাব দেয়া যাবে না। যেমন সালামের জবাবে আপনাকে সু-স্বাগতম বা আপনাকে ধন্যবাদ। কারণ সালামের রূপ ও জবাবের রূপ উভয়ই ইসলামী শরীয়াতে বর্ণিত আছে। কাজেই তা বাদ দিয়ে নিজের মনগড়া কোন রূপ ব্যবহার করা যাবে না। এর দলিল হিসাবে আমরা সূরা নিসার ৮৬ নম্বর আয়াত উল্লেখ করতে পারি। আ্ল্লাহ পাক বলেন, তোমাদের যদি সালামের মাধ্যমে দোয়া করে তা হলে তোমরাও তার চেয়ে উত্তম বা তারই মত করে সালামের মাধ্যেমে উত্তর দিবে। সালাম দাতার চেয়ে উত্তম জবাব কি হবে এ ব্যাপরে উপরে বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস উল্লেখ করা যায়। হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে রাসূল আপনার উপর সালাম, তখন রাসূল (সাঃ) জবাবে বললেন আপনার উপরেও আল্লাাহর পক্ষ থেকে সালাম ও রহমাত। এর পরে আর এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে একটু বাড়িয়ে সালাম দিলেন, “আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম ও রহমাত। তখন রাসূল (সাঃ) উত্তরে একটু বাড়িয়ে বললেন যে, আপনার ওপরেও আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম, রহমাত ও বরকত। আর এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) এর কাছে এসে অনেক বাড়িয়ে লম্বা করে সালাম দিলেন, যেমন হে রাসূল (সাঃ) আপনার উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম, রহমত ও বরকত। তখন রাসূল (সাঃ) এই ব্যক্তির সালামের জবাবে সংক্ষিপ্ত ভাবে বললেন ওয়ালাইকুম অর্থ তোমাদের উপরেও। তখন ঐ ব্যক্তি অভিযোগের সুরে রাসূল (সাঃ) কে বললেন, হুজুর ওমুক ওমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিল আর আপনি তাদের সালামের চেয়ে জবাবে বেশী বলেছিলেন। কিন্তু আমাকে সংক্ষেপ করে জবাব দিলেন এর কারণ কি? তখন রাসূল (সাঃ) তাকে বললেন, তুমি তো আমার জন্য কিছু বাকী রাখনি, সব বলে ফেলেছ। অত্র হাদীসের আলোকে বুঝা গেল, কেহ যদি আসসালামু আলাইকুম বলে তাকে উত্তরে বলতে হবে অ-আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। এমনি ভাবে কেহ যদি আস-সালামু আলাইকুম সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে সালাম প্রদান করেন তখন তার জবাবে বলবেন ওয়লাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,হাদীসের আলোকে বারাকাতুহু পর্যন্ত বলার সুয়োগ আছে। কাজেই কেহ যদি তার মনগড়া অন্যান্য শব্দ প্রয়োগ করে সালামের উত্তর দেন তা বৈধ হবে না। আপনার উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম, রহমাত, বরকত, ক্ষমা, রেজামান্দি, ভালবাসা ও জান্নাত ইত্যাতি যদিও দোয়া বা উত্তম শব্দ তবুও ইচ্ছামত ইবাদাতের উদ্দেশ্যে এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। কেননা রাসূলের হাদীসে শুধু বারাকাতুহু পর্যন্ত বলার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। আর যেহেতু সালাম প্রদান করা একটি ইবাদাত , তাই ইবাদাতের ব্যাপারে বাড়ানো বা কমানো জায়েজ হবে না।
৬) কারো মাধ্যমে যদি কেহ সালাম প্রেরণ করে, যেমন কেহ যদি এসে বলেন , অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম জানিয়েছেন তখন এ ক্ষেত্রে সালামের উত্তর হবে ওয়ালাইহেস সালাম ওয়া রহমত “অর্থাr তার ওপরেও আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম ও রহমত” এ প্রমাণ হিসাবে ইমাম বোখারী কর্তৃক বর্ণিত কিতাবুল ইস্তেজানের একটি হাদীস উল্লেখ করা যায়। মা আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) আমাকে বললেন, জিব্রাঈল (আঃ) তোমাকে সালাম জানিয়েছেন। তখন মা আয়েশা জবাবে বললেন, জিব্রাঈলের উপরেও সালাম ও আল্লাহর রহমাত । বর্ণিত হাদীস দ্বারা আমরা শিখতে পারলাম, লোক মারফত বা লিখিত আকারে সালাম দেয়া বৈধ। তেমনি লোক মারফত বা লিখিত ভাবে সালাম দিলে তার জবাব দেয়াও ওয়াজিব। যেমনটা সাক্ষাতে ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রেও সালাম প্রেরণকারীর চেয়ে একটু বাড়িয়ে উত্তর দিতে হবে। এ জন্য মা আয়েশা (রাঃ) জিব্রাঈল (আঃ) এর পাঠানো সালামের জবাব একটু বাড়িয়ে বলেছিলেন।
৭) কাফির মুশরিকদের সাথে যদিও সালাম বিনিময় বৈধ নয়, তথাপিও যদি কোন মুশরিক বা কাফির ব্যক্তি সালাম প্রদান করে তখন একজন মুসলমান তার জবাবে বলবে ওয়ালাইকা তোমার ওপরও। এর দলিল হিসাবে ইমাম বোখারীর হাদীস উল্লেখ করতে পারি, যেমন হজরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী কারীম (সাঃ) বলেন, আহলে কিতাব (ইয়াহুদ,নাছারা ) তোমাদের সালাম দেয়, তখন তাদের উত্তরে বলবে ওয়ালাইকুম অর্থ তোমার উপরেও।
যে সমস্ত অবস্থায় সালাম দেয়া নিষেধঃ
সালাম ইসলাম ধর্মে একটি উrকৃষ্ট সংস্কৃতি । সাথে সাথে ইবাদাতও বটে । তাই সালাম যত্রতত্র ব্যবহার করা যাবে না বা এ নিয়ে খেল তামাসা ও ঠাট্টা করা যাবে না। সালামের অবমাননা হয় এমন ক্নো কাজও করা যাবে না। নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হল।
১) একজন মুসলমান একজন মুশরিক বা কাফিরকে আগে সালাম দিবে না। কেননা আল্লাহ পাক বিধর্মীদের সাথে ভালবাসা করতে এবং তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। কাজেই সালাম যখন বন্ধুত্ব ও ভালবাসার প্রতীক তখন কাফির বা মুশরিকদের সালাম দেয়া যাবেনা। কুরআনের সূরা আল ইমরানের ১১৮ নং আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,একমাত্র মুসলমান ভাই ছাড়া অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা রাখবে না। অন্য দিকে এ ব্যাপারে রাসূল (সঃ) এর বাণী এসেছে। ইমাম মুসলিম এর বর্ণনায় এসেছে হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) বলেছেন, তোমরা ইয়াহুদী ও নাছারাদের সালাম দিবেনা যদি তাদের সাথে কখনও দেখা হয়ে যায় তখন তাদেরকে সংকীর্ণ ও কোনঠাসা করে রাখবে। আর এ ব্যবস্থা এজন্য করা হয়েছে যে, কাফেরেরা যাতে মনে না করে যে মুসলমানরা আমাদের ভালবাসে বা আমাদেরকে ভয় পায়। আর একথা যদি তারা বুঝতে পারে তখন আত্মমর্যাদা বোধে ও গর্বে মাতোয়ারা হয়ে যাবে। যা একজনমুসলমান হিসাবে আমাদের কাম্য হতে পারে না।