প্রশ্নঃ আল্লাহ বিনা কারনেই বান্দাকে মোহর মেরে দেয়,তাই বান্দা হেদায়েত পায় না সুতরাং আল্লাহর দোষ ?
🖋লিখেছেনঃ এম ডি আলী
উত্তরঃ ভুলে ভরা ফালতু প্রশ্ন এটি । তাছাড়া আমি অবাক হই যখন দেখি এই সস্তা প্রশ্নটি আমাকে খগেনরা জিজ্ঞেস করে । আপনি জানলে আরও অবাক হবেন , এই প্রশ্নের উপর স্বয়ং নাস্তিকদেরই বিশ্বাস নেই, যদি সে এই প্রশ্নের উপর বিশ্বাস করে তাহলে নিজেই নাস্তিক হতে পারবে না । কারন “আল্লাহ বান্দাকে বিনা কারনে মোহর মেরে দেয় তাই বান্দা হেদায়েত পায় না সুতরাং আল্লাহর দোষ” এই কথা যদি কোন নাস্তিক বিশ্বাস করে তাহলে সে নাস্তিক থাকে কি করে ? যেখানে সে আল্লাহকেই অস্বীকার করে সেখানে আবার আল্লাহকেই স্বীকার করে মেনে, তার উপরে আবার আল্লাহকেই দোষ দিয়ে সেটাকে বিশ্বাস করা । এটা হাস্যকর নাতো কি ? বাংলায় প্রবাদ আছে “নাচতে না জানলে উঠান বাকা” খগেনদের অবস্থা অনেকতা এই জাতের । যাইহোক।
আল্লাহ মোহর মেরে দেয় এই বিষয়ে কুরআনে যা বলা আছে তা হলঃ
* সূরা বাকারা ২:৬,৭ = নিশ্চিতই যারা কাফের হয়েছে তাদেরকে আপনি ভয় প্রদর্শন করুন আর নাই করুন তাতে কিছুই আসে যায় না, তারা ঈমান আনবে না। আল্লাহ তাদের হৃদয় ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন, তাদের চোখের উপর আবরণ রয়েছে এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।
তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড, ৪৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ এই আয়াতটি আবু জাহেল, আবু লাহাব, উতবা , শাইবা এ ধরনের নির্দিষ্ট কিছু কাফেরদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে । যাদের ব্যাপারে আল্লাহর ইলম ছিল যে তারা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে । তারা কখনোই ইসলাম গ্রহন করবে না, সব কাফেরদের ব্যাপারে এই আয়াত নয় কারন এ কথা তো দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে এই আয়াত নাজিল হওয়ার পরেও অনেক কাফের মুসলমান হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে ইনশা আল্লাহ ।
তাফসীরে জালালাইন ১ খণ্ড, ৯০ পৃষ্ঠায় দেয়া হয়েছে চমৎকার উত্তর অর্থাৎ মূলত কুরআনের ঐ আয়াত দ্বারা সাধারন কাফের উদ্দেশ্য নয় বরং বিশেষ প্রতিশ্রুত ঐ সকল কাফের উদ্দেশ্য যাদের জন্য আল্লাহর ইলমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে এরা শেষ পর্যন্ত ইমান গ্রহন করবে না , বরং কুফরের উপরেই অটল থাকবে ।
যেমন আবু জাহেল ও আবু লাহাব প্রমুখ । তা ছাড়া “সাওয়া উন আলাইহিম” দ্বারা উদ্দেশ্য এই নয় যে এখন তার তাদেরকে দিনের বিধানাবলি শুনানোর এবং তাদের কাছে তাবলীগের প্রয়োজন নেই । কেননা এ তাবলীগ তো রাসুল (সা) এর উপর মর্যাদাশীল ফরজ । সুতরাং তারপরেও তিনি তাবলীগ বন্ধ করেননি । মুফাসসির (রহ) উক্ত সন্দেহকেই দূর করার দিকে “ফালা তাত মাআ” দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন অর্থাৎ তাবলীগ ছেড়ে দেয়া উদ্দেশ্য নয় বরং তাদের থেকে ইমান গ্রহনের ব্যাপারে বিশ্বাস ও আশা না রাখার কথা বলা হচ্ছে । কেননা আশার বিপরীত ফল দ্বারা দুঃখ ও বেদনার সম্মুখীন হতে হয়। আম্বিয়া (আ) এর অন্তর যেহেতু স্নেহ ও দয়ায় পরিপূর্ণ থাকে । তাঁরা যেহেতু অধিক মহাব্বত ও স্নেহ করে থাকেন কাফেরদের ইমান পোষণের ব্যাপারে তারপর এর বিপরীত হলে কত বড় ও অসহনীয় দুঃখ তাদের মনে আসতে পারে । তাই এই আয়াতের স্থানে তাবলীগের ব্যাপারে সংযমী হওয়ার তালীম দেয়া হয়েছে । অর্থাৎ খগেন আবু জাহেল ও খগেন আবু লাহাবের মত ঐসব লোকও এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত , যাদের ইমান না আনার বিষয়টি আল্লাহর ইলমে রয়েছে ।
তাছাড়া আল্লাহ বিনা কারনেই মোহর মেরেছেন এমন কথা তো কুরআনে বলা হয়নি বরং সুরা বাকারা ২:১০ = তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত আর আল্লাহ তাদের ব্যধি আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন। বস্তুতঃ তাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে ভয়াবহ আযাব, তাদের মিথ্যাচারের দরুন। মোহর কেন মারা হয়েছে সেটার উত্তর এই আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে অর্থাৎ যেহেতু কাফেররা আল্লাহকে অস্বীকার করে এবং সেটা প্রমানের জন্য ইচ্ছা করেই মিথ্যা কথা বলে আর এসব মিথ্যাচারের উপরে অটল থাকে তাই এসব কাজ খুবই অন্যায় আর তাই তাদের এই অন্যায় হল এক প্রকার রোগ যেটা বৃদ্ধি পায় প্রচুর মিথ্যাচারের ফলে আর এই সিস্টেম আল্লাহ করেছেন ।
সুতরাং আল্লাহ ইচ্ছা করেই মোহর মারেন না বরং কাফেরদের ইচ্ছা করে জালিয়াতির জন্য এই রোগ বেড়ে যায় তাই তাদের দিলে মহর পড়ে যায় । এখানে আল্লাহ ইচ্ছা করেই অন্তর কান চোখ বন্ধ করেছেন এই কথা ভুল । কেননা তাফসীরে ইবনে আব্বাস ১ খণ্ড, ১৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে: ইমান আনার ইচ্ছাই কাফেরদের নেই । আল্লাহর জানা আছে যে , তারা ইমান আনবে না । অর্থাৎ এই কারনেই তাদের পরিনতি যেহেতু ফাইনাল তাই মোহর মেরে দেয়া হয় ।
তাফসীরে জালালাইন ১ খণ্ড, ৯১ পৃষ্ঠায় আরও বলা হয়েছে যেঃ যখন আল্লাহ স্বয়ং তাদের ইমান গ্রহন না করার কথা বলেছেন । তাঁর সংবাদের বিপরীত হওয়া যেহেতু অসম্ভব তাই ইমান গ্রহন না করার ক্ষেত্রে এখন তাদেরকে অপারগ মনে করতে হবে এবং তাদের উপর কোন ধরনের অভিযোগ নেই এমন কথা অনেক মূর্খ নাস্তিককে বলতে শোনা যায় অথচ প্রকৃত তত্ত্ব হচ্ছে আল্লাহর “তারা ইমান গ্রহন করবে না” এই কথা বলা এমনই, যেমন কোন ডাক্তার কোন বিপদসস্কুল রোগীকে দেখে তার মৃত্যুর ভবিষ্যৎবানী করে দেয় এবং সে রোগী ডাক্তারের কথানুযায়ী ঐ সময়ে সত্যিই মরে যায় ।
তবে এই কারনে ডাক্তারের উপর কোন অভিযোগ আসবে না । এ কথা বলা যাবে না , যে ডাক্তার বলার কারনে রোগী মারা গেছে , যদি ডাক্তার না বলতো তবে রোগী মরতো না । বরং এটাই বলা হবে যে স্বয়ং ডাক্তারের এ কথা বলা “এ সময়ের মধ্যে মারা যাবে” রোগীর অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ছিল , যা সঠিক হয়েছে । এমনিভাবে এস্থানে আল্লাহর জানা ও সংবাদকে তাদের অধার্মিকতা ও দুরবস্থার কারন বলা যাবে না বরং তাদের অন্যায় আচরণ, অপকর্ম ও অধার্মিকতাকে আল্লাহর সংবাদের কারন সাব্যস্ত করা হবে । অর্থাৎ তাদের দূর অবস্থার উপর ভিত্তি করে আল্লার এ সংবাদ দিয়েছেন যা সঠিক হয়েছে । আল্লাহ দোষী নয় বরং বান্দার অপকর্মই দায়ী । আরেকটি প্রশ্ন আসে যে তারা যদি ইমান নাই আনে তাহলে তাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা বা না করাও উভয় সমান তাহলে ভীতি প্রদর্শন কেন করা হল ? উত্তর হল এসকল কাফেররা যেন কিয়ামতের দিন কোন অজুহাত পেশ করতে না পারে এই কারনে ।
তাফসীরে জালালাইন ১ খণ্ড, ৯২ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছেঃ যেহেতু কুফর ও নাফরমানিতে সদা – সর্বদা লিপ্ত থাকার কারনে কাফেরদের অন্তর সমূহে হক তথা সত্য গ্রহনের যোগ্যতাশুন্য হয়ে পড়েছিল । অর্থাৎ এর জন্য তারা নিজেদের দোষেই এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল । মূলত এটি হল আল্লাহর দেয়া মানুষের উপর একটি সিস্টেম । এখন কেউ যদি এই সিস্টেম ফলো না করে তাহলে সেটি তার দোষ আল্লাহর নয় , মানে কোন কাফের যদি তার অপকর্ম , গোমরাহী , অহংকার , প্রবৃত্তিপুজা , মিথ্যাচার , ইত্যাদি যত খারাপ কাজ আছে এবং সে যদি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেগুলা থেকে তওবা না করে তার অপরাধের দিকেই অটল থাকে তাহলে সে আল্লাহর সিস্টেমে দেয়া মোহরের মধ্যে পড়ে যাবে । এখন কেউ যদি আল্লাহকে স্বীকার করে এবং নেক কাজ করে নবীজির দেখানো পথে চলে তাহলে সে এই সিস্টেমের মধ্যে অর্থাৎ মোহরের মধ্যে পড়বে না ।
সহজ কথা।
সুরা বাকারা ২:১০ = তাদের অন্তর সমুহে ব্যাধি সুতরাং আল্লাহ্ তাদের ব্যাধি বাড়িয়ে দিয়েছেন , আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব কারন তারা মিথ্যা বলত । যেমন পাপ কাজ করতে করতে উগ্র কাফেরদের মাঝে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয় পড়ে ভাল কাজ তাদের কাছে আর ভাল লাগে না এদের উদাহরণ নোংরায় বসবাসকারী পোকার মত যেই পোকার কাছে আতরের গ্রান সহ্য হয় না অনেক সময়ে মারাও যায় সেই আতরের গন্ধে কিন্তু নোংরার বাজে গন্ধ তার কাছেই কিছুই মনে হয় না – স্বাভাবিক লাগে । ঠিক একই ভাবে ইসলাম বিদ্বেষীতা করতে করতে , কুরআন হাদিস দিয়ে ইচ্ছা করেই জালিয়াতি মিথ্যাচার করতে করতে , রাসুলকে নিয়ে গালাগালি দিতে দিতে কাফেরের অন্তরে এমন একটি অবস্থার তৈরি হয় যে শেষ পর্যন্ত তার কাছে ইসলাম আর ভাল লাগে না ফলে সে এর উপরেই অটল থাকে > যেহেতু সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এমনই থাকবে আর আল্লাহ জানেন এই ভবিষ্যতের খবর তাই আল্লাহ সেটা আগেই কুরআনে বুঝিয়ে দিয়েছেন মোহর মারা দিয়ে অর্থাৎ এটাই ফাইনাল যে সেই খগেন উগ্র কাফের আর ইসলামে ফিরেই আসবেই না ।
যেমন হাদিসে আছে , জামে আত তিরমিজি, হাদিসঃ ৩৩৩৪ , হাসান হাদিসঃ আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বান্দা যখন একটি গুনাহ করে তখন তার অন্তরের মধ্যে একটি কালো চিহ্ন পড়ে। অতঃপর যখন সে গুনাহর কাজ পরিহার করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তাওবা করে তার অন্তর তখন পরিষ্কার ও দাগমুক্ত হয়ে যায়। সে আবার পাপ করলে তার অন্তরে দাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তার পুরো অন্তর এভাবে কালো দাগে ঢেকে যায়। এটাই সেই মরিচা আল্লাহ তা’আলা যার বর্ণনা করেছেনঃ “কখনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের মনে জং (মরিচা) ধরিয়েছে” – (সূরা মুত্বাফফিফীন ১৪)।
এই হাদিস থেকে আমরা জানতে পারলামঃ
১/ মুমিন গুনাহ করলে অন্তরে দাগ পড়ে ।
২/ তওবা করলে মুছে যায় , তওবা না করলে মুছে না ।
৩/ তওবা না করলে সেটি বৃদ্ধিই পেতে থাকে ।
৪/ ফলে তার অন্তরের রোগ আরও ভহাবহ আকার ধারন করে ।
৫/ মুমিন যেহেতু ইসলাম বিদ্বেষীতা করে না আবার অন্যায়য়ের উপর অটল থাকে না তাই তার তওবার সুযোগ থাকে কিন্তু উগ্র কাফের যে ইসলাম বিদ্বেষীতা করবেই বলে স্থির করে ফেলেছে সে তো আর তওবার সুযোগ পাবে না অর্থাৎ তওবাই করবে না । এখানেই পার্থক্য ।
১/ মুমিন গুনাহ করলে অন্তরে দাগ পড়ে ।
২/ তওবা করলে মুছে যায় , তওবা না করলে মুছে না ।
৩/ তওবা না করলে সেটি বৃদ্ধিই পেতে থাকে ।
৪/ ফলে তার অন্তরের রোগ আরও ভহাবহ আকার ধারন করে ।
৫/ মুমিন যেহেতু ইসলাম বিদ্বেষীতা করে না আবার অন্যায়য়ের উপর অটল থাকে না তাই তার তওবার সুযোগ থাকে কিন্তু উগ্র কাফের যে ইসলাম বিদ্বেষীতা করবেই বলে স্থির করে ফেলেছে সে তো আর তওবার সুযোগ পাবে না অর্থাৎ তওবাই করবে না । এখানেই পার্থক্য ।
সহজে বুঝার জন্য কিছু উদাহরণঃ
উদাহরণ: ধরুন, আমি বললাম,- ‘যারা খাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে, আপনি তাদের খেতে বলুন আর না বলুন, তারা কোনভাবেই খাবে না।আল্লাহ তাদের দেহ শুকিয়ে দেন।তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেন।তাদের জন্য রয়েছে কঠিন অসুখ।
খেয়াল করুন – এখানে তারা অসুস্থ হচ্ছে, তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, তারা কঠিন অসুখে পরতে যাচ্ছে- কেন এসব হচ্ছে? আল্লাহ কি ইচ্ছা করেই তাদের সাথে এগুলো করছে? নাহ। এগুলো তাদের কর্মফল।তাদের যতোই জোর করা হোক, তারা যখন কোনভাবেই খাবেনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে – তখন সিষ্টেমেটিক্যালি না খাওয়ার ফলে তাদের শরীর শুকিয়ে যাবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে।তারা কঠিন রোগে পতিত হবে। এসবকিছুর জন্য তারাই দায়ী।এখানে আল্লাহর ইচ্ছে বা অনিচ্ছে কিছুই নেই। কিন্তু, সিষ্টেমটা আল্লাহই চালাচ্ছেন।আল্লাহ একটি সিষ্টেম রেডি করে দিয়েছেন। আপনি না খেলে আপনার শরীর আল্লাহ শুকিয়ে দেবেন।আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেবেন।দিনশেষে, আপনার একটি কঠিন রোগ হবে। এটা একটা সিষ্টেম।এই সিষ্টেমে আপনি তখনই পড়বেন- যখন আপনি নিজ থেকে খাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন।
ঠিক সেভাবেই- যারা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে যে, তাদের সামনে যতো প্রমান, যতো দলিলই আসুক, তারা সত্যকে মেনে নিবে না, অস্বীকার করবেই করবে, তাদের অন্তরে আর কানে সিষ্টেমেটিক্যালি একটি সিল পরে যাচ্ছে। না খাওয়ার ফলে আপনি যেভাবে শুকিয়ে যান, আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, আপনার কঠিন অসুখ হয়, ঠিক সেভাবে, বিশ্বাস করবেন না বলে সিদ্ধান্ত যখন নিয়েই ফেলেছেন- তখন আপনার অন্তরে,কানে সিল পরে যাচ্ছে, আর দিনশেষে, আপনার জন্য অপেক্ষা করছে কঠিন অসুখ, আই মিন আজাব।এরজন্য আল্লাহকে ব্লেইম করা হবে কেনো?
আল্লাহ মোহর মেরেছেন এটা বলবে কিন্তু কেন মেরেছেন: এই বিষয়ে কুরআনের আয়াত নাস্তিকরা আপনাকে কখনোই দেখাবে না কারন দেখালে তো তারা সরলমনা মুসলিম ভাইদের কাছে জালিয়াতি করতে পারবে না । আল্লাহ নিজেই কুরআনে পরিস্কার বলে দিয়েছেন যে তিনি বিনা কারনে কাউকেই মোহর মারেন না ।
নিচের আয়াত সমূহ সব পড়ুন মনোযোগ দিয়েঃ
সূরা মুতাফফিফীন ৮৩:১৪ = কাফেরদের কথা সত্য নয় বরং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে ।
সুরা নিসা ৪:১৪৭,১৪৮ = যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো এবং ইমান আনো তাহলে তোমাদেরকে আযাব দিয়ে আল্লাহ্কি করবেন ? আল্লাহ্পুরস্কার দানকারী, সর্বজ্ঞ । মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ্পছন্দ করেন না , তবে কারো উপর যুলুম করা হলে ভিন্ন কথা ।
সুরা বাকারা ২:২৮৬ = আল্লাহ্ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কাজ চাপিয়ে দেন না ।
সুরা জাসিয়া ৪৫:৭ = দুর্ভোগ প্রত্যেক চরম মিথ্যুক পাপাচারীর জন্য ।
সুরা জাসিয়া ৪৫:৯ = যখন সে আমার আয়াত সমূহের কিছু জানতে পারে তখন সে এটাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অপমানকর শাস্তি ।
সুরা ইউনুস ১০:১০৮ = হে মানুষ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য এসেছে । সুতরাং যে হিদায়েত গ্রহণ করবে সে নিজের জন্যই হিদায়েত গ্রহন করবে আর যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ক্ষতির জন্য পথভ্রষ্ট হবে ।
সুরা বাকারা ২:৮৮ = তারা বলল আমাদের অন্তর সমূহ আচ্ছাদিত বরং তাদের কুফুরির কারনে আল্লাহ্ তাদেরকে লানত করেছেন অতপর তারা খুব কমই ইমান আনে ।
সুরা তওবা ৯:৭০ = তাদের কাছে তাদের রাসুলগন প্রমান সমূহ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, অতএব আল্লাহ্তাদের উপর জুলুম করার নন বরং তারাই তাদের নিজেদের উপর জুলুম করছিল ।
সুরা জাসিয়া ৪৫:৮ = সে শোনে আল্লাহ্র আয়াত সমূহ যা তার সামনে তিলওয়াত করা হচ্ছে,অতপর সে অহংকারবশত সে এমনভাবে হঠকারিতা করে যেন সে তা শুনেইনি। অতএব তুমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দেও ।
সুরা ইবরাহীম ১৪:২৮ = তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।
সুরা হুমাযা ১০৪:১ = দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে সামনে নিন্দাকারী ও পিছনে গীবতকারী ।
সুরা তওবা ৯:৮০ = আল্লাহ্ ফাসেক মানুষদের হেদায়েত দেন না ।
সুরা তওবা ৯:৮০ = আল্লাহ্ ফাসেক মানুষদের হেদায়েত দেন না ।
মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য ধ্বংস = সুরা মুরসালাত ৭৭: ১৫,১৯,২৪,২৮,৩৪,৩৭,৪০,৪৫,৪৭,৪৯।
সুরা কাহফ ১৮: ২৯ = সত্য হল আল্লাহ্র পক্ষ থেকে । সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে যেন ইমান আসে এবং যে ইচ্ছা করে সে যেন কুফুরি করে।
সুরা কাসাস ২৮:৫০ = তারা যদি তোমার আহ্বানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখো তারা তো নিজেদের খেয়াল খুশির অনুসরন করে, আর আল্লাহ্র দিক নির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়াল খুশির অনুসরন করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে ? নিশ্চয় আল্লাহ্জালিম কওমকে হিদায়েত করেন না ।
সুরা ইনসান ৭৬:৩ = অবশ্যই আমি তাকে পথ দেখিয়েছি এখন হয় সে কৃতজ্ঞ অথবা অকৃতজ্ঞ ।
সুরা শামস ৯১:৯,১০ = নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে লোক তাকে পরিশুদ্ধ করেছে এবং সে ব্যর্থ্য হয়েছে যে তার নফসকে পাপে নষ্ট করেছে ।
সুরা মুযযাম্মিল ৭৩:১৯ = যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার দিকে পথ অবলম্বন করুক।
আরেকটি বিষয় বুঝতে হবেঃ
খগেন আবু জাহেল , খগেন আবু লাহাব , সন্ত্রাসী কাব বিন আশরাফ এই জাতের ইত্যাদি হাইব্রিড খগেন বাদে যাদের কথা কুরআনে স্পষ্ট করে বলা হয়নি অথবা কাকে মোহর মারা হয়েছে অথবা কাকে দেয়া হয়নি সেই বিষয়ে আমরা বর্তমানে জানি না তাই আমাদের উচিৎ হবে সকল অমুসলিম ভাইদের ইসলামের সত্যতা জানিয়ে দেয়া অর্থাৎ তাদেরকে দাওয়াত দেয়া বা দিতে থাকা । কারন আল্লাহ নিজেই বলেছেন ইসলামের কথা প্রচার করতে । যেমনঃ
সুরা নাহল ১৬:১২৫ = তুমি তোমার রবের পথে হিকমাহ ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে দাওয়াত দেও এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক করো ।
সুরা আল ইমরান ৩:২০ = যদি তারা সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,তবে তোমার দায়িত্ব তো শুধু সত্য পৌঁছে দেয়া ।
সুরা গাশিয়া ৮৮:২১,২২ = আপনি উপদেশ দিতে থাকুন,আপনি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র । আপনি তাদের দায়গ্রস্ত কর্ম নিয়ন্ত্রক নন ।
সুরা নাজম ৫৩:৩৯,৪০ = মানুষ শুদু তাই পায় যা সে অর্জন করে এবং তার কর্ম শীঘ্রই তাকে দেখানো হবে।
“আল্লাহ ইচ্ছা করেই বিনা কারনে কাফেরদের মোহর মেরে দিয়েছেন তাই তারা হেদায়েত পাচ্ছে না” এই কথা ডাহা মিথ্যাচার এবং ভুল ভরে একটি কথা বরং কাফেরদের অন্যায় পাপ কাজ এবং সকল খারাপ কাজের উপর অটল থাকার কারনেই তাদেরকে মোহর মারা হয়েছে হয়েছে । এটি জানার পড়ে নাস্তিক অন্ধ বিশ্বাসীদের আর কোন মিথ্যাচারের সুযোগ থাকে না ।
আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন
* তাফসীরে জালালাইন ১ খণ্ড, ৯১ থেকে ৯৫ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড , ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ১ খণ্ড, ৪১ ও ৪২ পৃষ্ঠা
* তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড , ৫৬ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে ওসমানী ১ খণ্ড , ১৫ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে আহসানুল বয়ান , ৬ ও ৭ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ খণ্ড, ১৫৬ থেকে ১৬১ পৃষ্ঠা।
* তাফহীমূল কুরআন । সূরা বাকারা ২: ৬ থেকে ৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ।
* তাফসীরে তাবারী শরীফ ১ খণ্ড , সূরা বাকারার ৬ ও ৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ।
* তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন ১ খণ্ড , ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন ১ খণ্ড, ৪১ ও ৪২ পৃষ্ঠা
* তাফসীরে ফী যিলাযিল কুরআন ১ খণ্ড , ৫৬ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে ওসমানী ১ খণ্ড , ১৫ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে মাযহারী ১ খণ্ড, ৪৮ ও ৪৯ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে আহসানুল বয়ান , ৬ ও ৭ পৃষ্ঠা ।
* তাফসীরে ইবনে কাসীর ১ খণ্ড, ১৫৬ থেকে ১৬১ পৃষ্ঠা।
* তাফহীমূল কুরআন । সূরা বাকারা ২: ৬ থেকে ৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ।
* তাফসীরে তাবারী শরীফ ১ খণ্ড , সূরা বাকারার ৬ ও ৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ।
প্রশ্ন উত্তর পর্ব
🔘প্রশ্ন ১ = জুম্মার নামাজ অবহেলা করে বাদ দিলে মোহর পড়ে যায় আর মোহর পড়লে তো নেক কাজ করা যাবে না তাহলে কোন মুসলিম যদি জুম্মার নামাজ অবহেলা করে তিন জুম্মাহ মিস করে তাহলে হাদিস অনুযায়ী মোহর পড়লে এটি কি অন্যায় নয় ?
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১১২৫ , হাসান সহিহঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি অবহেলা করে একাধারে তিন জুমুআহ্ ত্যাগ করলো, তার অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয় ।
সুনানে ইবনে মাজাহ , হাদিসঃ ১১২৭ , হাসান সহিহঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, শোন! তোমাদের কেউ বকরী চরাবার জন্য এক বা দু’ মাইল দূরে চলে গেল, অতঃপর সেখানে ঘাস না পেয়ে আরও দূরে চলে গেল, তারপর জুমুআর দিন এলো, কিন্তু সে এসে জুমুআর সলাতে উপস্থিত হলো না। তারপর আরেক জুমুআহ এলো এবং সে তাতেও হাযির হলো না, তারপর আরেক জুমুআহ এলো এবং সে তাতেও হাযির হলো না, শেষে তার অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়।
📶উত্তরঃ এই হাদিসে আসলে উগ্র কাফেরদের মত যে মোহর মারা হবে সেরকম কিছুই বলা হয়নি । সহিহ মুসলীম শরীফ, সহজ ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ , সম্পাদনা হাফেয মাওলানা মুহাম্মদ হাবীবুর রহমান , ২ খণ্ড , ৭৫৯ পৃষ্ঠায় “জুমুআ ত্যাগ সম্পর্কে কোঠর সতর্কবানী” শিরোনামে ঐ হাদিসের স্পষ্ট ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে অন্তরে মোহর অংকনের মর্ম বলতে কোন কোন গবেষক আল্লাহর রহমত উদ্দেশ্য অর্থাৎ যে ব্যাক্তি জুমা পরিত্যাগ করবে সে আল্লাহর অনুকম্পা হতে দূরে সরে যাবে । আবার কোন কোন গবেষকের মতে আল্লাহ তাদের অন্তরে কুফুরী সৃষ্টি করে দিবে । জুমার নামার অনাদায়ী ব্যাক্তির অন্তরে এমন একটি আবরণ আচ্ছাদিত করা, যার ফলে সে সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে না । অপবিত্র অর্থাৎ জুমার নামাজ পরিত্যাগকারীর অন্তর অপবিত্র করে দেয়া হয় ।
হাদিস ৭৫০ , সহিহ হাদিসঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি বিনা ওজরে তিনটি জুমআহ ত্যাগ করবে, সে ব্যক্তি মুনাফিক ।
হাদিস ৭৫৩ , সহিহ হাদিসঃ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ “যে ব্যক্তি পরপর ৩টি জুমআহ ত্যাগ করল, সে অবশ্যই ইসলামকে নিজের পিছনে ফেলে দিল।”
সুতরাং কোন মুসলিম যদি ইচ্ছা করে বিনা কারনেই পরপর তিন জুমা ত্যাগ করে তাহলে এটি খুবই অন্যায় , খুবই । এবং সে যদি তওবা না করে তাহলে তার অন্তর আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরে যাবে , সে মুনাফিক হয়ে এবং সে যেন ইসলামকে পিছনে ফেলে দিল তাই কোন মুসলিমের উচিৎ নয় যে সে ইচ্ছা করে বিনা কারনে তিন জুমা ত্যাগ করবে ।
তবে তিন শ্রেণীর মানুষের জন্য জুমার নামাজ ফরজ নয়ঃ
হাদিস ৭৫২ ,সহিহ হাদিসঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের জন্য জামাআত সহকারে জুমআহ ফরয। অবশ্য ৪ ব্যক্তির জন্য ফরয নয়; ক্রীতদাস, মহিলা, শিশু ও অসুস্থ।
🔘প্রশ্ন ২ = কুরআনের এক আয়াতে আছে আল্লাহ ইচ্ছা করেই মোহর মারেন যেমন সুরা জাসিয়া ৪৫:২৩ = আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশী কে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে? আল্লাহ জেনে শুনে তাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, তার কান ও অন্তরে মহর এঁটে দিয়েছেন এবং তার চোখের উপর রেখেছেন পর্দা। অতএব, আল্লাহর পর কে তাকে পথ প্রদর্শন করবে? তোমরা কি চিন্তাভাবনা কর না? = আপনার উপরের উত্তরে সাথে এটি সংঘাত হল না ?
📶উত্তরঃ আপনি এই আয়াত পড়েছেন ভাল কথা কিন্তু এই আয়াতেই তো বলা হয়েছে যে “আপনি কি তার প্রতি লক্ষ্য করেছেন, যে তার খেয়াল-খুশী কে স্বীয় উপাস্য স্থির করেছে?” এখান থেকেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে কাফেররা ইসলাম গ্রহন করবেই না এবং তারা নিজেদের প্রবৃত্তিকে উপাস্য বানিয়ে স্থির রেখেছে , যেহেতু তারা এই অন্যায় কাজ স্থির তাই আল্লাহও জেনে শুনেই মোহর মেরেছেন ব্যাস । আমার উপরের উত্তরের সাথে এই আয়াত মোটেও সংঘাত হয়নি বরং আরও পরিস্কার হয়েছে।
সুরা জাসিয়া ৪৫:২২ = আপনি ঐ আয়াতের আগের আয়াত পড়ুন যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না। এই আয়াতেও স্পষ্ট বলা হয়েছে যেমন কর্ম তেমন ফল আর কারো প্রতি কোন অন্যায় করা হবে না । এরপরে আল্লাহ সামেনের আয়াতেও পরিস্কার করে বলেছেন যে সুরা জাসিয়া ৪৫:২৭ = নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলের রাজত্ব আল্লাহরই। যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
🔘প্রশ্ন ৩ = সুরা আন’য়াম ৬:১১০ = আমি ঘুরিয়ে দিব তাদের অন্তর ও দৃষ্টিকে, যেমন-তারা এর প্রতি প্রথমবার বিশ্বাস স্থাপন করেনি এবং আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্ত ছেড়ে দিব। – এখানে আল্লাহ প্রথমবার কাফেরদের ইমান না আনার জন্য কাফেরদের অন্তর ঘুরিয়ে দিচ্ছে দ্বিতীয় হেদায়েতের সুযোগ না দিয়ে এখানে কি তাহলে আল্লাহর দোষ হচ্ছে না ? (নাউজুবিল্লাহ)
📶উত্তরঃ উপরের আয়াতে বলাই হয়নি যে কাফেররা হেদায়েত আনতে চেয়েছিল কিন্তু এরপরেও আল্লাহ তাদের অন্তর ঘুরিয়ে দিয়েছেন । আসলে কাফেররা প্রথমবার ইমান আনে নি এবং এর উপরেই অটল থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই আল্লাহ তাদের অন্তর অবাধ্যতায় ঘুরিয়ে দিয়েছেন । কাফেররা দ্বিতীয় সুযোগ নিবেই না যখন তখন আল্লাহ কেন তাদের হেদায়েত দিবেন ? আপনি আল্লাহকে মানবেন না এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এর উপর অটল থাকবেন বলে শপথ করছেন আবার আল্লাহকে দোষ দিয়ে বলছেন আল্লাহ কেন আপনাকে হেদায়েত দিচ্ছে না এটা তো হাস্যকর ।
অনেকটা এরকম যে কোন এক ছাত্র প্রথমবার ফেইল করেছে এবং সে জীবনে পাশ করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছে আবার শিক্ষককে দোষ দিচ্ছে যে স্যার কেন তাকে পাশ করায় না ? হাস্যকর ।
কেউ যদি ইমান না আনে এবং এর উপরেই অটল থাকতে চায় তাহলে তার অন্তর সেই দিকেই ঘুরে যাবে এটাই আল্লাহর সিস্টেম । কিন্তু কেউ যদি আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় এবং তওবা করতে পারে আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন আশা করা যায় । নিচের আয়াত থেকেই স্পষ্ট যে আল্লাহ বিনা কারনে কারো অন্তর ঘুরান না অর্থাৎ কেউ যদি কুফরের উপর অটল না থাকে তাহলে তার অন্তর সেই দিকে ঘুরবে না ।
সুরা আরাফ ৭:১৭৭ = কত খারাপ সে মানুষদের অবস্থা যারা আয়াত সমুহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করে এবং নিজেদের উপর জুলুম করে।
সুরা রাদ ১৩:১১ = নিশ্চয় আল্লাহ্কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে।
সুরা নাজম ৫৩:৩৯,৪০ = মানুষ শুধু তাই পায় যা সে অর্জন করে এবং তার কর্ম শীঘ্রই তাকে দেখানো হবে।
সুরা ইউনুস ১০:১০৮ = হে মানুষ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য এসেছে । সুতরাং যে হিদায়েত গ্রহণ করবে সে নিজের জন্যই হিদায়েত গ্রহন করবে আর যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ক্ষতির জন্য পথভ্রষ্ট হবে ।
সুরা কাহফ ১৮: ২৯ = সত্য হল আল্লাহ্র পক্ষ থেকে । সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে যেন ইমান আসে এবং যে ইচ্ছা করে সে যেন কুফুরি করে।
সূরা মুতাফফিফীন ৮৩:১৪ = কাফেরদের কথা সত্য নয় বরং তাদের কৃতকর্মের জন্য তাদের অন্তরে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে ।
🔘প্রশ্ন ৪ = সুরা আন’য়াম ৬:১০৭ = যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা শিরিক করত না। আমি আপনাকে তাদের সংরক্ষক করিনি এবং আপনি তাদের কার্যনির্বাহী নন। – এখানে তো বলা হচ্ছে আল্লাহ চান না যে কাফেররা হেদায়েত পাক তাই আল্লাহ বিনা কারনে তাদেরকে শিরিক করাচ্ছেন?
📶উত্তরঃ “যদি আল্লাহ চাইতেন তাহলে শিরিক করত না” এখানে আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এরমানে এই না যে আল্লাহ চান না তারা হেদায়েত হক । যেহেতু দুনিয়া পরীক্ষা হল তাই আল্লাহ কাউকে হুট করেই হেদায়েত দিবেন সেটা কিভাবে হয় যদি না সেই ব্যাক্তি নিজে কোন চেষ্টা না করে ।
ধরুন বিল গেটস একদিন বলল আমি ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের সকল যুবকে ধনী করে দিতে পারি কিন্তু করব না আমি চাই তারা চেষ্টা করুক । আচ্ছা এখানে কি কেউ বলবে যে বিল গেটস চায় যে বাংলাদেশ গরীব থাকুক ? উত্তর হচ্ছে না । ঠিক একইভাবে আল্লাহ যদি চান তাহলে দুনিয়ার সবাইকেই হেদায়েত দিতে পারে কিন্তু দিবেন না কারন আল্লাহ চান মানুষ হেদায়েত পাওয়ার জন্য চেষ্টা করুক । যেমনঃ সুরা ইউনুস ১০:১০৮ = হে মানুষ তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সত্য এসেছে । সুতরাং যে হিদায়েত গ্রহণ করবে সে নিজের জন্যই হিদায়েত গ্রহন করবে আর যে পথভ্রষ্ট হবে সে নিজের ক্ষতির জন্য পথভ্রষ্ট হবে ।
♻️সুতরাং পরিশেষে উপরের সকল তথ্য প্রমানের আলোকে আমাদের দাবি হলঃ
১/ “আল্লাহ বিনা কারনেই বান্দাকে মোহর মেরে দেয় , তাই বান্দা হেদায়েত পায় না সুতরাং আল্লাহর দোষ” এই দাবিতে নাস্তিকরা বিশ্বাস করে না যদি করে তাহলে তারা নাস্তিক বিশ্বাস হারাবে ।
২/ কুরআন অথবা সহিহ হাদিসের কোথাও বলে হয় নি যে আল্লাহ ইচ্ছা করেই বিনা কারনে উগ্র কাফেরদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন ।
৩/ আল্লাহ উগ্র কাফেরদের অন্তরে তখনই মেরেছেন যখন তারা কখনই ইসলাম ফিরে আসবে না।
৪/ উগ্র কাফেরদের মিথ্যাচার , ভণ্ডামি , ইসলাম বিদ্বেষীতা , মুসলিমদের হত্যা করতে চাওয়া , নবীজিকে হত্যা করতে চাওয়া ইত্যাদি অপরাধের জন্য আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন । তারা এসব কাজ না করলে আল্লাহও মোহর মেরে দিত না ।
৫/ “আল্লাহর মোহর মেরেছেন” এটি আসলে আল্লাহর একটি সিস্টেম মানুষের প্রতি । যেমন আপনি না খেলে ক্ষুধা লাগবে , বিড়ি খেলে আপনার ক্ষতি হবে , বিষাক্ত জিনিস খেলে আপনি মারা যাবেন ঠিক একইভাবে আপনি (কাফের) নিকৃষ্ট অন্যায় কাজ করবেন আপনার অন্তরে মোহর পড়ে যাবে । তাই এসব কাজ করবেন না।
৬/ আল্লাহ বলেছেন বলে যে তারা ইসলাম গ্রহন করেনি এটি সঠিক নয় বরং আল্লাহ জানেন তারা ইসলামেই আর আসবে না তাই তিনি মোহর মেরে দিয়েছেন ।
৭/ যেহেতু আমরা জানি না বর্তমানে কাকে মোহর মারা হয়েছে সেহেতু আমাদের সত্যর দাওয়াতের কাজ বন্ধ করা যাবে না ।
৮/ বিনা কারনে , অযথাই যদি কোন মুসলিম পরপর তিন জুমা ত্যাগ করে তাকে মোহর মারা হবে তবে উগ্র কাফেরদের মত নয় বরং তার অন্তরে এমন কিছু তৈরি হবে যাতে সে ইসলাম থেকে উদাসিন হবে কিন্তু সে যদি তওবা করে তাহলে আল্লাহ মাফ করে দিবে ।
৯/ কুরআন অথবা হাদিস থেকে এমন কোন তথ্য দেখান যে আল্লাহ বিনা কারনেই তাদেরকে মোহর মেরেছেন ?
১০/ আল্লাহ অস্বীকার করেন আবার আল্লাহ কাকে মোহর মারল আর কাকে মোহর মারল না সেটি নিয়ে আপনার এত কষ্ট কেন ? এই কষ্টের কোন অর্থ নেই ? কিভাবে ? থাকলে সেটা কেরকম?
১১/ নাস্তিক ধর্মের অনুসারী হতে কেন ও কিভাবে বিশ্বাস করেন “”আল্লাহ বিনা কারনেই বান্দাকে মোহর মেরে দেয় , তাই বান্দা হেদায়েত পায় না সুতরাং আল্লাহর দোষ” ?
১২/ নাস্তিক ধর্মের একটি স্বপ্ন হল পুরা দুনিয়াতে সবাই “নাস্তিক ধর্ম” গ্রহন করুক এবং ইসলাম না থাকুক তাহলে প্রশ্ন হল “ইসলাম বলে “মিথ্যাবাদীদের জন্য ধ্বংস” তাই আপনার বিশ্বাস অনুযায়ী আপনাকে অবশ্যই ইসলামের বিপরীত কাজ করে তথা বেশি বেশি মিথ্যা কথা বলে সফলতা অর্জন করে ইসলামকে ভুল প্রমান করতে হবে কিন্তু কয়জন নাস্তিক এমন করে ? সুতরাং তারা কিভাবে দাবিতে অটল ? সুতরাং তাদের দাবি ভুল ?
1 Comments
Pingback: পাপের কারণে অন্তর ও কানে মোহর (সূরা ২ বাকারা: ৬-৭ ) - বেস্টআর্নআইডিয়া.কম