২৬- কৃপণতা বৃদ্ধি পাবে।
কৃপণতা একটি নিকৃষ্ট অভ্যাস। আল্লাহ যাকে এই বদ অভ্যাস থেকে হেফাযত করবেন সে অবশ্যই সফলকাম হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ ‘‘যারা কার্পণ্য হতে নিজেদেরকে মুক্ত করেছে তারাই সফলকাম’’। (সূরা হাশরঃ ৯)
ইসলাম সম্পদশীল লোকদেরকে আল্লাহর পথে ও ভাল কাজে সম্পদ খরচ করতে আদেশ করেছে এবং কৃপণতা করতে নিষেধ করেছে।
কিন্তু কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে এই উম্মাতের ধনী লোকেরা দরিদ্র, অভাবী এবং ইয়াতীমদের জন্য খরচ করা থেকে বিরত থাকবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘কৃপণতা বৃদ্ধি পাওয়া কিয়ামতের অন্যতম আলামত’’।
– ফাতহুলবারী, (১৩/১৫) অনেক পূর্বেই এই আলামতটি দেখা দিয়েছে। বর্তমানেও মুসলিম সমাজে এক শ্রেণীর লোক প্রচুর সম্পদের অধিকারী। অভাবী ও দরিদ্র লোকেরা অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের চোখের সামনেই দিনাতিপাত করছে। অথচ খুব অল্প সংখ্যক সম্পদশালী লোকই এদিকে ভ্রুক্ষেপ করে থাকে।
২৭ – ভূমিকম্প বৃদ্ধি পাবে
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
لَا تَقُوْم السَّاعَةُ حَتَّى َتَكْثُرَ الزَّلَازِلُ
‘‘বেশী বেশী ভূমিকম্প না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবেনা’’। ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের অনেক দেশেই বহু ভূমিকম্পের আবির্ভাব হয়েছে। বর্তমানে আমরা প্রায়ই পত্র-পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে ভূমিকম্পের খবর শুনতে পাই।
হতে পারে এগুলোই কিয়ামতের আলামত হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।
যদি তা না হয়ে থাকে তাহলে আমরা বলবোঃ এসব ভূমিকম্প কিয়ামতের আলামত হিসেবে প্রকাশিতব্য ভূমিকম্পের প্রাথমিক পর্যায় স্বরূপ।
২০০৫ ইং সালে শ্রীলংকা, ইন্দোনেশীয়া, থাইল্যান্ড ও ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয়ার কয়েকটি দেশে হয়ে যাওয়া সুনামীর ঘটনা কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি সুস্পষ্ট আলামত।
বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং ৬৬৩৬)
২৮- মানুষের আকৃতি রূপান্তর, ভূমি ধ্বস ও আকাশ থেকে পাথর পড়া (ভূমিধস ও চেহারা বিকৃতির শাস্তি দেখা দিবে)।
আখেরী যামানায় যখন অশ্লীলতা ও পাপাচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে তখন এই উম্মাতের কিছু লোককে বিভিন্ন প্রকার শাস্তিতে পাকড়াও করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
يَكُوْنُ فِىْ آخِرِ هذِهِ الأُمَّةِ خَسْفٌ و مَسْخٌ وَقَذْفٌ قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللَّه! أَ نُهْلَكُ وَ فِيْنَا الصَّالِحُوْنَ؟ قَالَ: نَعْمُ, إِذا ظَهَرَ الْخَبَثُ
‘‘আখেরী যামানায় এই উম্মাতের কিছু লোককে ভূমিধস, চেহারা পরিবর্তন এবং উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করে শাস্তি দেয়া হবে।
আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো?
উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ হ্যাঁ, যখন অশ্লীলতা বৃদ্ধি পাবে’’।
– তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৮০১২ ।
তিনি আরো বলেনঃ
بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ مَسْخٌ وَخَسْفٌ وَقَذْفٌ
‘‘কিয়ামতের পূর্বে ভূমিধস, চেহারা পরিবর্তন এবং উপরে উঠিয়ে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে’’।
– ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ২৮৫৩।
আমাদের যামানায় এবং আমাদের পূর্ববর্তী যামানায় পূর্ব ও পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অনেক ভূমিধসের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।
এটি কঠিন আযাবের পূর্ব সংকেত এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর বান্দাদের জন্যে ভীতি প্রদর্শন এবং গুনাহগার ও বিদআতীদের জন্য শাস্তি স্বরূপ।
যাতে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে ও তাদের প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন করে এবং এটাও বিশ্বাস করে যে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী।
গান-বাজনাতে মত্ত এবং মদ পানকারীদেরকে উপরোক্ত শাস্তি প্রদান করা হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ خَسْفٌ وَمَسْخٌ وَقَذْفٌ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَتَى ذَاكَ قَالَ إِذَا ظَهَرَتِ الْقَيْنَاتُ وَالْمَعَازِفُ وَشُرِبَتِ الْخُمُورُ
‘‘এই উম্মাতের মধ্যে ভূমিধস, চেহারা বিকৃতি এবং উপর থেকে নিক্ষেপ করে ধ্বংস করার শাস্তি আসবে।
জনৈক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! কখন এরূপ হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যখন ব্যাপক হারে গায়িকা, বাদ্যযন্ত্র এবং মদ্যপানের প্রসার ঘটবে’’।
– তিরমিযী, অধ্যায়ঃ আবওয়াবুল ফিতান। সহীহুল জামে আস্ সাগীর, হাদীছ নং- ৪১১৯।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ ‘‘আমার উম্মতের একদল লোক মদ্যপানে লিপ্ত হবে।
তবে মদের নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে নামকরণ করবে। তারা বাদ্যযন্ত্র, বাঁশি বাজানো ও গান-বাজনা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে।
তাদের কতককে মাটির নীচে দাবিয়ে দেয়া হবে এবং অন্য এক দলকে শুকর ও বানরে পরিণত করা হবে’’। পাপ কাজ ও নাফরমানীতে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহ তাআলা বনী ইসরাঈলের এক শ্রেণীর লোকের চেহারা পরিবর্তন করে শুকর ও বানরে পরিবর্তন করে ধ্বংস করেছিলেন।
তবে এই উম্মাতের মাঝে এখনও চেহারা পরিবর্তনের শাস্তি আসেনি। কিয়ামতের পূর্বে মানুষ যখন জেনা-ব্যভিচার, মদ্যপান এবং গান-বাজনাসহ নানা ধরণের পাপের কাজে লিপ্ত হবে তখন এই শাস্তি অবশ্যই আসবে। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সহীহ হাদীছে এ ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। তা কিয়ামতের পূর্বে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।