YouTube চ্যানেলের Monetization প্রশ্নের উত্তর ২০১৮
প্রশ্ন ১। YouTube কবে আমার চ্যানেলের Monetization অ্যাপ্রুভ করবে? কথা ছিল এই এপ্রিলের শেষের দিকে অতচ এখন শুনতে পাচ্ছি সেটা মে মাসে?
উত্তরঃ এই বছর ইউটিউবের মেজর কিছু আপডেটের একটি হচ্ছে ‘ম্যানুয়াল রিভিউ সিস্টেম’, অর্থাৎ আগে যেকেউ ইউটিউবে একটি চ্যানেল তৈরি করেই Monetization -এর জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হত, এখন আর তেমনটি হচ্ছে না; তার পরিবর্তে একজন ইউটিউব স্টাফ শুধুমাত্র আপনার চ্যানেলের ভিডিও গুলোই যাচাই করেন না, সেই সাথে যাচাই করেন চ্যানেল হিষ্ট্রি অর্থাৎ চ্যানেলের স্ট্রাইক, মন্তব্য, জিমেইল একাউন্ট এক্টিভিটি ইত্যাদি। এই কাজগুলো আগে করতো অটোম্যাটিক সিস্টেম আর সেখানে অনেক ফাঁক-ফোঁকর থেকে যেতো।
এ নিয়ে গত বছরের শেষ দিকে বিজ্ঞাপনদাতাদের সাথে ইউটিউবের দন্দ দেখা দেয়, তারপর আসে বিশাল পরিবর্তন, যাকে আমরা জানি Advertiser Friendly Policy নামে। YPP বা YouTube Partner Program -এর যোগ্য হতে হলে আপনার ভিডিওগুলো অবশ্যই Advertiser Friendly Policy মেনে চলতে হবে।
এই কাজের সবগুলোই এখন দেয়া হয়েছে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমের পরিবর্তে মানুষের হাতে, আর এখানেই দেখা দিয়েছে জনবল সঙ্কট। নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্রায় ৬০০০ নতুন স্টাফ, চলছে তাদের প্রশিক্ষণ পর্ব, তাতেই প্রত্যাশিত সময়সীমা অতিক্রম করেছে আপনার Monetization Application -এর রিভিউ।
প্রশ্ন ২। তাহলে কবে নাগাদ আমরা রিভিউ -এর ফলাফল আশা করতে পারি?
উত্তরঃ অফিসিয়াল সুত্রে বলা হয়েছে জুন মাসের শেষের দিকে। নতুন স্টাফদের ট্রেনিং সম্পূর্ণ হলেই তাদের কাজে লাগিয়ে দেয়া হবে। যদিও এখন রিভিউ চলমান আছে এবং সেটা খুব যাচাই-বাচাই করেই প্রধান্য দেয়া হচ্ছে সর্বাধিক ভিউ আছে এমন চ্যানেল অউনারদেরকে।
প্রশ্ন ৩। হঠাৎ করে আমার চ্যানেলে Monetization ডিজেবল হয়ে গেছে, কিংবা বিজ্ঞাপনের হার কমে গেছে, কেন?
উত্তরঃ আপনার চ্যানেল নতুন নিয়ম অর্থাৎ YPP ফলো করে না তাই। এই নিয়ম অনুসারে যেকোনো সময় আপনি 4000hrs (চার হাজার ঘণ্টা) ওয়াচ টাইম ও 1000 (এক হাজার) সাবস্ক্রাইভার কোটা পূর্ণ করলে Monetization -এর জন্য আবেদন করতে পারেন।
প্রশ্ন ৪। ২০১৮ সালে কি কি আপডেট এসেছে?
উত্তরঃ এই বছরের শুরু থেকে:–
১ – ১০,০০০ সাবস্ক্রাইবার আছে এমনসব চ্যানেলে Community Tab চালু করা হয়েছে। (যদিও এটি সবার জন্য এখনো উন্মুক্ত নয়)
২ – কন্টেন্ট এর উপর কড়া নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বিজ্ঞাপনদাতাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে। এক্ষেত্রে যেকোনো ভিডিওতে আগের তুলনায় বিজ্ঞাপন দেখানো হয় না, সেটা কন্টেন্ট নির্মাতাদের বুঝিয়ে দেয়া হয় $ (Dollar Icon) আইকন হলুদ করে দিয়ে।
৩ – নেটওয়ার্ক কানেকশন স্লো -এমন ১৪০টি দেশে চালু করা হয়েছে YouTube Go.
৪ – YouTube Live ফিচারকে করা হয়েছে আরও সহজ, উন্মুক্ত। যুক্ত করা হয়েছে Live chat replays, অটোম্যাটিক ক্যাপশন ও লোকেশন ট্যাগ, বিস্তৃত করা হয়েছে ‘সুপার চ্যাট’ ও IFTTT (If This, Then That) নামের ফিচার।
৫ – হেইট স্পীচ, গ্রাফিক্স ও গান ভায়োলেন্স তথা কমিউনিটি গাইডলাইন সুরক্ষায় নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা।
৬ – জানুয়ারি ২০১৮ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৮৩ লাখেরও বেশী ভিডিও ডিলিট করে দেয়া হয়েছে একজন মানুষও সেগুলো দেখার আগে, এসবের অধিকাংশই ফ্ল্যাগ করেছিল ইউটিউবের অটোম্যাটিক সিস্টেম।
৭ – রিপোর্ট, ফ্ল্যাগ কিংবা যেকোনো ধরনের ইউজার ফিডব্যাককে পূর্বের তুলনায় অধিক গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিপ্লাই ও সাপোর্ট বাড়ানো হয়েছে প্রায় ৬০০ গুণ।
প্রশ্ন ৫। প্রতিদিন কিংবা প্রতি সপ্তাহে আমি ইউনিক ও উন্নত ভিডিও আপলোড দেই তবুও আমার ভিউ হয় না, সাবস্ক্রাইভার বৃদ্ধি পায় না, এমন কেন হচ্ছে?
উত্তরঃ এবার লক্ষ করুন নীচের ফটোটি। দুটি ফটোই এক, অতচ ১ নং ফটো থেকে ২ নং ফটোর পার্থক্য অবশ্যই চোখে পড়ার মত, নয় কি?
একে বলে স্কিল- দক্ষতা। আর এমন কিছু করতে দরকার হয় অভিজ্ঞতা, আবার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দুটোই আছে তবুও চ্যানেলে ভিউ নেই, সাবস্ক্রাইভার নেই, কারণ?
ইমাজিনেশন কিংবা সৃষ্টিশীলতা নেই আপনার কাজে। ৭৫,০০০ সদস্যের ইউটিউব গ্রুপে আপনাদের পোস্ট, প্রশ্ন আর ব্যাকগ্রাউন্ড দেখে সেটাই মনে হল।
এই ছবিটি যুক্ত করার কারণ? এটা বুঝানো যে ‘সৃষ্টিশীলতা আর দক্ষতা’ অবশ্যই জরুরী।
আমাদের দেশে যত ইউটিউব হেল্প গ্রুপ আছে, পৃথিবীর অন্যকোন দেশে এমনটা আছে বলে আমার বিশ্বাস হয়না।
তারপরও আমাদের কয়জন সফল ইউটিউবার হতে পেরেছে? হাতেগোণা কয়েকজন।
যারা সফল হয়েছে তাদের কাজের ধরন দেখুন, ঈর্ষা না করে অনুকরণ ও অনুসরণ করুন। আর সফল ইউটিউবারদের কেউই কিন্তু গ্রুপে এসে হেল্প চায় না, তারা কোন গ্রুপের সাথেও নেই।
কেন?
কারণ- তাদের ইমাজিনেশন কিংবা সৃষ্টিশীলতা আছে আর সেটা তারা কাজে লাগায়। তারা গুরুত্ব দেয় দর্শকের পছন্দ ও চাহিদাকে।
আপনি যে কন্টেন্ট নিয়ে আজ Monetization -এর জন্য আবেদন করেছেন, অন্য ৯ জন থেকে আপনার চ্যানেল কতটা ভিন্ন একবারও বিচার করেছেন? প্রশ্ন থাকলো।
এবার আসি ভিউ প্রসঙ্গেঃ
তিক্ত সত্য উত্তর হচ্ছে- আপনাদের বস্তাপচা সস্তা ভিডিও আর টাইটেল, সেই টাইটেল কিংবা থাম্বনেইল -এর আড়ালে লুকানো বোরিং ভিডিও মানুষ দেখতে চায় না, এমন ভিডিও ইউটিউবে হাজার হাজার আছে, একই ধরনের ভিদিও মানুষ কতবার দেখবে? কপি-কাট আর কত? এরপরও আশা করেন মানুষ সাবস্ক্রাইভ করবে আপনার চ্যানেল?
কেন করবে?
কি এমন বিশেষ কিছু আছে যে দর্শক আপনার পরবর্তী ভিডিও দেখার জন্য উদগ্রীব থাকবে? এও প্রশ্ন থাকলো।
প্রশ্ন ৬। তাহলে আমরা যারা ছোটখাটো ইউটিউবার, আমরা কি ছেড়ে দেবো ইউটিউবিং?
উত্তরঃ আপনি ইউটিউবে কাজ করবেন না ইউটিউবকে DDoS করে ডাউন করে দেবেন সেটা আমি বলার কে, তাই না?
তবে বাংলাদেশী ইউটিউবারদের দুর্দশা দেখে ‘ফ্রী উপদেশ’ হিসেবে বলতে চাই- ইউটিউব থেকে টাকা আয় করা এতো সহজ না। রাম, শ্যাম, যদু, মধুর ও চ্যানেল আছে তবে তারা কতটা ভালো, উন্নত কন্টেন্ট নিয়ে কাজ করছে আর কতটাকা আয় করে সেটা বিচার্য।
ইউটিউবে আসার আগে কখনো ভিডিও এডিটিং শিখেছেন?
যে প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে কাজ করবেন কখনো তার নিয়ম-নীতিগুলো পড়ে দেখেছেন?
ভুল করেও ইউটিউব -এর Terms (https://www.youtube.com/t/terms) গুলো একটি বার চোখে দেখেছেন? কিংবা তাদের Community Guidelines (http://youtube.com/t/community_guidelines) গুলো?
আমি খুব সিউর বাংলাদেশের ৯৮% ইউটিউবার কোনোদিন এসবের নাম শুনে নি, ফলাফল কি হয়েছে দেখতে পেয়েছেন আশা করি?
আপনাদের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে ৪০০০ (চার হাজার ঘণ্টা)’র ভিডিও ভিউ আর ১ হাজার সাবস্ক্রাইভার।
CTR, CPA, CPR, Impression, Ad Unites, YPP, Ads Friendly Content এসবের নাম শুনেছেন?
কি বিশেষ দক্ষতা আপনার আছে যা ইউটিউবের মাধ্যমে মানুষকে দেখিয়ে টাকা আয় করার সাহস করেন?
YouTube -এর head tag অর্থাৎ পেজের একেবারে উপরের বাম দিকে চোখ বুলিয়ে দেখুন, লিখা আছে ‘YouTube – Broadcast Yourself’; মানে ‘নিজেকে সম্প্রচার করুন’ -নিজের কি যোগ্যতা কিংবা বিশেষ গুণ আছে যে সম্প্রচার করবেন?
কথাগুলো তিতা লাগছে? লাগাটাই স্বাভাবিক। তবুও আরেকবার পড়ুন, প্রশ্ন করুন নিজেকে আমি কতটা ভুল আর আপনি কতটা সঠিক?
কালেক্ট ফেসবুক>>>>>>-
CREDIT BY Minhaz Hussain